ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও আবু বকর ও জাহিদুলের পড়ালেখা অনিশ্চিত

আবু বকর সিদ্দিক ও মো. জাহিদুল ইসলাম (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

আবু বকর সিদ্দিক ও মো. জাহিদুল ইসলাম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আবু বকর উন্নয়ন বিভাগে ও জাহিদুল নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু দারিদ্র্য ও আর্থিক সমস্যায় তাঁদের লেখাপড়া অনিশ্চিত। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তাঁদের পরিবার।

আবু বকর চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দক্ষিণ ফতেপুর গ্রামের মো. আলী মোল্লার ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আবু বকর সবার ছোট। আর জাহিদুল ইসলাম মতলব দক্ষিণ উপজেলার পশ্চিম বাইশপুর গ্রামের মো. আইয়ুব খানের ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জাহিদুল সবার ছোট।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবু বকর ও জাহিদুল দুজনই মতলব দক্ষিণ উপজেলার মতলব সরকারি কলেজের মানবিক শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। এর আগে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায়ও তাঁরা স্থানীয় মতলব জেবি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখা থেকে জিপিএ-৫ পান।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ‘খ’ ইউনিট থেকে আবু বকর মেধাতালিকায় ৩৬৬তম ও জাহিদুল ১১৪৩তম হন। পরে আবু বকর উন্নয়ন অধ্যয়ন ও জাহিদুল নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। গতকাল সোমবার তাঁরা ভর্তি হয়েছেন।

আবু বকর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা বিদেশে ছিলেন। কয়েক বছর আগে অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। এখন কিছুই করেন না। বাড়িতে জমিজমা, এমনকি থাকার ঘরও নেই। তিনি ও তাঁর পরিবার মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি ও তাঁর বোন টিউশনি করে বাসাভাড়া ও সংসারের খরচ চালাচ্ছেন। লেখাপড়ার খরচও জোগাচ্ছেন। পরিবারে আয়ের আর কোনো উৎস নেই।

আবু বকর আরও বলেন, অর্থাভাবে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সম্মান শ্রেণির বই কেনা, ঢাকায় থাকা-খাওয়ার খরচ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি কীভাবে মেটাবেন জানেন না। আপাতত স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। সামনে কী হবে ওপরওয়ালা জানেন।

আবু বকরের বাবা মো. আলী মোল্লা বলেন, ‘অনেক আশা ছিল ছেলেটা উচ্চশিক্ষা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে। টাকার অভাবে তার লেখাপড়াই অনিশ্চিত এখন। কীভাবে তার লেখাপড়ার খরচ দেব। সংসারের খাওয়া-পরাই তো ঠিকমতো জোটে না।’

আরেক শিক্ষার্থী জাহিদুলের বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন ২০১৮ সালে। অসুস্থ শরীর নিয়ে কিছুই করতে পারেন না। পরিবারের হাল ধরার মতোও কেউ নেই। জায়গাজমিও নেই। সম্বল বলতে একটি বসতঘরই। বড় ভাই ছোট একটি চাকরি করেন। জাহিদুল কয়েকটি টিউশনি করেন। এ দিয়েই কোনো রকম সংসার ও লেখাপড়ার খরচ চলে।

জাহিদুল বলেন, নবম শ্রেণি থেকেই টিউশনি করছেন। কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। উচ্চশিক্ষা শেষ করে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে চাকরি নেওয়ার স্বপ্ন তাঁর। অর্থাভাবে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই হবে কি না তা অনিশ্চিত। সামনে শুধু অন্ধকার দেখছেন।

জাহিদুলের বাবা মো. আইয়ুব খান বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছে। এ অবস্থায় ছেলেকে কীভাবে পড়াবেন বুঝতে পারছেন না। হয়তো টাকার অভাবে তাঁর ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।