আবদুল্লাহপুরে যাত্রী নামিয়ে বাসে বাসে পুলিশের তল্লাশি, হয়রানির অভিযোগ

তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার আবদুল্লাহপুর মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখ আবদুল্লাহপুর মোড়ে বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে এ তল্লাশি। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি হয়রানির অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

আবদুল্লাহপুর মোড়ে খাইরুন নাহার নামের এক নারী বলছিলেন, ‘আমরা মহিলা মানুষ। কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যাই না। তাও আমাগোর ব্যাগ চেক করছে। অযথাই একটা হয়রানি।’

ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে আবদুল্লাহপুর মোড়ে। এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেন মানুষ। ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের একাধিক জেলার লোকজন রাজধানীতে প্রবেশ করেন। এখানে দুটি সড়ক ঘিরেই বসেছে তল্লাশি।

বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার আবদুল্লাহপুর মোড়ে
ছবি: আল-আমিন

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, আবদুল্লাহপুর মোড়ে বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসড়কের নিচে বসেছে তল্লাশিচৌকি। পাশেই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে দূরপাল্লার কোনো বাস আসতে দেখলেই গতিরোধ করেছেন তাঁরা। বাসে উঠে প্রথমে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। এরপর চালকের আসন ও বাসের আসনসহ তল্লাশি করছেন পুরো বাস। তল্লাশির কারণে প্রতিটি বাসকে গড়ে সাত থেকে আট মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া যাত্রীদের একজন ষাটোর্ধ্ব রমজান আলী। ময়মনসিংহের একটি বাসে যাচ্ছিলেন মহাখালী। আবদুল্লাহপুর মোড়ে আসতেই পুলিশি বাধায় নামতে  হয়েছে বাস থেকে। তাঁর ক্লান্ত শরীর। হাতে দুটি ভারী ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তার পাশে। প্রায় পাঁচ মিনিট তল্লাশি শেষে আবার উঠে বসেন বাসে। যাওয়ার আগে কথা হলে রমজান আলী ক্ষোভ ঝেড়ে  বললেন, ‘এটা কোনো কথা হতে পারে নয়। কোথায় কী (সমাবেশ) হবে, না হবে, সে জন্য আমাদের এভাবে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। সেই সকাল থেইক্যা বাসে বইসা থেকে শরীর আর কুলাচ্ছে না। তারপর এইখানে আইসা এভাবে হয়রানি হতে হইল। আমাদের সময়ের কোনো দাম নাই।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

যে হাত মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দিতে হবে: শেখ হাসিনা

নয়াপল্টন ‘ক্রাইম জোন’ চিহ্নিত, সাংবাদিকদেরও যেতে দিচ্ছে না পুলিশ

‘জামায়াতমুক্ত’ করার রাজনৈতিক প্রকল্প যে পরিণতি পেল

‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে সব সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে সরকার’

রমজান আলীর সঙ্গে কথা বলতেই নেত্রকোনা থেকে আসা শাহজালাল এক্সপ্রেস নামের আরও একটি বাসের গতিরোধ করে পুলিশ। সব যাত্রী নামিয়ে বাসের ভেতরে অন্তত পাঁচজন পুলিশ সদস্য প্রবেশ করে তল্লাশি শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কোনো কোনো যাত্রী।

পুলিশি এই তল্লাশিচৌকির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তরা বিভাগের এডিসি (অপরাধ) বদরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাবেশকে ঘিরে কেউ যেন কোনো ধরনের নাশকতা বা আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, সে জন্যই আমরা সড়কে অবস্থান করছি। সকাল থেকেই বিভিন্ন তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছি।’ যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্যই এ কার্যক্রম। এখানে হয়রানির কিছু নেই। কয়েক মিনিটের তল্লাশি কারও খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে না।

যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি হেঁটে আসা পথচারীদের তল্লাশি করতে দেখা যায়।