প্রবাসীকে হত্যা মামলায় স্ত্রীসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ড, প্রধান আসামি খালাস

মৃত্যুদণ্ড
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার হোমনায় পরকীয়ার জের ধরে মো. আবদুল জলিল নামের এক প্রবাসীকে গলা কেটে হত্যার দায়ে ওই ব্যক্তির স্ত্রীসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার একটি আদালত। কিন্তু মামলার ১ নম্বর আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার কারার কান্দি গ্রামের মো. কুদ্দুস মিয়া (৩২), একই উপজেলার মঙ্গলকান্দি গ্রামের মাইক্রোবাসের চালক আবদুল খালেক (২৮) ও কান্দি গ্রামের মো. রাজীব (২৬) এবং নিহত ব্যক্তির স্ত্রী মোসা. শাহনেওয়াজ বেগম। মামলায় খালাস পেয়েছেন হোমনা উপজেলার গোয়ারীভাঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী মামলার ১ নম্বর আসামি মো. শাহজাহান (৪২)। রায় ঘোষণার সময় শাহজাহান আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি অনুপস্থিত ছিলেন।

প্রধান আসামির খালাস পাওয়া প্রসঙ্গে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. তাইফুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগপত্রে শাহজাহানের নাম ১ নম্বর আসামি হিসেবে থাকলেও ১৬৪ ধারায় তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল না। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জবানবন্দিতেও তাঁর নাম ছিল না। যে কারণে শাহজাহান খালাস পান। এ ছাড়া যে নারীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ তোলা হয়, সেই নারীও আদালতকে জানান শাহজাহান নির্দোষ। প্রসিকিউশনে দুর্বলতা থাকায় ১ নং আসামি খালাস পান।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, হোমনা উপজেলার গোয়ারীভাঙ্গা গ্রামের মো. শাহজাহানের সঙ্গে সৌদিআরবপ্রবাসী আবদুল জলিলের স্ত্রী শাহনেওয়াজ বেগমের অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। এর জের ধরে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে জলিলকে ঢাকায় চিকিৎসার করানোর কথা বলে ২০১৩ সালের ৯ জুন থেকে ১০ জুন হোমনার বাহেরখোলা গ্রামের কেরার মাজারসংলগ্ন পাকা রাস্তার পশ্চিম পাশে নিয়ে গলা কেটে হত্যার পর লাশ গুম করেন। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা হাসপাতাল ও আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে লোকমুখে জানতে পারেন, কেরার মাজারসংলগ্ন পাকার রাস্তার পশ্চিম পাশে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ পড়ে আছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জলিলের লাশ শনাক্ত করেন স্বজনেরা।

এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই তাইজুল ইসলাম (৩৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হোমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলার পর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি কুদ্দুছ, আ. খালেক, রাজীব ও মূল পরিকল্পনাকারী নিহত ব্যক্তির স্ত্রী শাহনেওয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়।

মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরে যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষে এবং আসামি রাজীব, শাহনেওয়াজ বেগম ও আ. খালেকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১ নম্বর আসামি শাহজাহানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মো. আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রেখে দ্রুত রায় বাস্তবায়ন করবেন।’ অপর দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাইফুর আলম রায়ের কপি হাতে পেলে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।