তিন গুণ বেশি হাসিল আদায়
হাসিলের পরিমাণ জানানোর জন্য হাটের প্রবেশপথে তালিকা ঝোলানোর নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
নাটোরের সিংড়া পশুরহাটে সরকার নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া হাসিলের পরিমাণ জানানোর জন্য হাটের প্রবেশপথে তালিকা ঝোলানোর নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো তদারকি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হাসিল বাবদ প্রতিটি গরু ও মহিষের জন্য ক্রেতার কাছ থেকে ৩১০-৫৩০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৫৫-১০৫ টাকা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রতিটি ছাগল বা ভেড়া বাবদ ক্রেতার কাছ থেকে ১০১-২০৫ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ২০-৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিংড়া পশুরহাটে গরু ও মহিষ বাবদ ক্রেতার কাছ থেকে ১০০০-১৫০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০-৫০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে প্রতিটি ছাগল বা ভেড়া বাবদ ক্রেতার কাছ ৩০০-৫০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০-২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট পৌর ও ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে হাসিলের হার প্রদর্শনের জন্য সাইনবোর্ড লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিংড়াসহ জেলার কোনো হাটে এ ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
গতকাল সোমবার ছিল সিংড়া পশুরহাটের দিন। এটি উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুরহাট। ভোর থেকেই সিংড়া শহরের সেতুসংলগ্ন হাটে বিপুলসংখ্যক পশু আসতে শুরু করে। সকাল থেকেই কেনাবেচা শুরু হয়। হাটের ইজারাদারের লোকজন গরু, মহিষ ও ছাগল বাবদ নির্ধারিত হারের অন্তত তিন গুণ বেশি হাসিল আদায় করছেন।
নাটোর শহর থেকে আসা পারভেজ হোসেন জানালেন, তিনি ৭২ হাজার টাকায় গরু কিনে ১০০০ হাজার টাকা হাসিল দিতে বাধ্য হয়েছেন। রসিদে হাসিলের পরিমাণও লেখা হয়নি।
নন্দীগ্রামের জমসেদ আলী ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় গরু কিনে ১ হাজার ২০০ টাকা হাসিল দিয়েছেন বলে জানান। ওই গরুর বিক্রেতাও ২০০ টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তেরবাড়িয়ার সাজ্জাত হোসেন জানান, তিনি ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায় গরু কিনে ১ হাজার ৩০০ টাকা হাসিল দিয়েছেন। বিক্রেতা রবিউলকে দিতে হয়েছে ২০০ টাকা।
জোরমল্লিকার মোকছেদ আলী জানান, তিনি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় গরু কিনে অনেক বাদানুবাদের পর ১০০০ হাজার টাকা হাসিল দিয়েছেন। বিক্রেতার কাছ থেকেও ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
সিংড়া পশুর হাটের ইজারাদার জয়দেব সাহা হাসিল বেশি নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ঈদের আগের হাট। খরচ বেশি। তাই বেশি হাসিল নেওয়া হচ্ছে। আগের ইজারাদারও গতবার বেশি নিয়েছিলেন। রসিদে হাসিলের পরিমাণ না লেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো ব্যস্ততার কারণে লেখক পরিমাণ উল্লেখ করেননি।
পাঁচটি ফাঁকা রসিদ সংগ্রহ করে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুনকে দেখানো হলে তিনি বলেন, ‘এটা অন্যায়। আমি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাঠাচ্ছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’
নাটোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসিল আদায়ের তালিকা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এটা হাটের প্রবেশপথে ঝুলিয়ে দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।