নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে আবার গোলাগুলি, আতঙ্কে স্থানীয়রা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারের দক্ষিণের উঁচু পাহাড়টি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের। সেখানে এক মাসেরও বেশি সময় আরাকান আর্মির সঙ্গে ধরে যুদ্ধ হচ্ছে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চাকধালা থেকে দোছড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ভূখণ্ডে প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। এতে সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তের চেরারমাঠসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পাশের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ শনিবার সকাল নয়টার দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে গোলাগুলির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এতে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি হওয়ায় চেরারমাঠেও কিছু কিছু মেশিনগানের গুলি এসে পড়ছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গোলাগুলি চলছে বলে জানা গেছে।  

চেরারমাঠে প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস। তাঁরা সবাই পাশের পাড়ায় সরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় গোলাগুলি ও চেরারমাঠ, ফুলতলি, জামছড়ি এলাকার লোকজন সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল।

চেরারমাঠের বাসিন্দা মাবিয়া খাতুন বলেন, তাঁদের বাড়ি সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি। তাঁদের বাড়ির বিপরীতে সীমান্তের ওপারে বৃষ্টির মতো গোলাগুলি চলছে। কিছু গুলি পাড়ায় এসে পড়ছে। এ জন্য আতঙ্কে থাকতে না পেরে তাঁরা এখন দক্ষিণ চাকধালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
একইপাড়ার সাহাব মিয়া বলেন, বাড়ির মালামাল, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি সব ফেলে তাঁরা শুধু জীবন নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। তাঁরা এখন চাকধালা বাজার এলাকায় সরে এসেছেন। তাঁদের প্রতিবেশীরা আমতলিমাঠ ও লাম্বামাঠ, আবার অনেকে চাকধালা এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও চেরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা ফরিদুল আলম বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে পাড়ার লোকজনকে আপাতত নিরাপদ দূরত্বে সরে থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক, নারী ও শিশুদের সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে বাড়িতে মালামাল সবকিছু রয়েছে। গোলাগুলি কমে গেলে লোকজন আবার বাড়ি ফিরবেন।

নাইক্ষ্যংছড়ির সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, সীমান্তের ৪৩ পিলার থেকে দোছড়ি ইউনিয়নের ৫০ পিলার পর্যন্ত এলাকাজুড়ে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। এ জন্য তাঁর ইউনিয়নের চেরারমাঠ, ফুলতলি, জামছড়িসহ কয়েকটি সীমান্তঘেঁষা পাড়ার লোকজনকে সরিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে ওই এলাকার মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের সীমান্তচৌকিগুলো বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) দখলে ছিল। এখন ওই সীমান্তচৌকিগুলো পুনঃ দখলের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য দুই পক্ষের যুদ্ধ চলছে।

দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ বলেন, দোছড়ির বাইরমাঠ এলাকার বিপরীতে একটি মিয়ানমারের একটি সীমান্তচৌকি রয়েছে। সেখানেও গোলাগুলি হচ্ছে। তবে এলাকার লোকজন আতঙ্কে থাকলেও এখনো সরে যায়নি।

সীমান্তে গোলাগুলি ও লোকজন সরে যাওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ সাড়া দেননি।

এর আগে ১০ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়। প্রায় ১২ দিন পর আবার আজ গোলাগুলি শুরু হয়েছে।