ট্রলার-স্পিডবোট চলাচল শুরু, বাড়তি ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ

পড়ন্ত বিকেলে সাগর থেকে ফিরছে মাছ ধরার একটি নৌকা। ছবিটি কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন সমুদ্রসৈকত থেকে তোলা
ফাইল ছবি: জামিউল ইসলাম

বঙ্গোপসাগর দুই দফা নিম্নচাপের প্রভাবে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন উপকূল প্রচণ্ড উত্তাল ছিল। ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি লেগেই ছিল। সে কারণে গত সোমবার পর্যন্ত টানা ৯ দিন টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে দ্বীপে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রথম দফায় ট্রলার চলাচল শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই নৌপথে স্পিডবোট চলাচলও শুরু হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, আগের চেয়ে ট্রলারে ৫০ এবং স্পিডবোটে ১৫০ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৩৪ কিলোমিটারের এ জলপথ পাড়ি দিতে ট্রলারে জনপ্রতি দিতে হচ্ছে ৩০০ এবং স্পিডবোটে ৮৫০ টাকা।

এ ছাড়া টেকনাফের বাজার থেকে চাল, ডাল, তেল, তরিতরকারি–সবজি, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ট্রলার বোঝাই করে সেন্টমার্টি আনার জন্য গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। সেন্টমার্টিনের সাড়ে ১০ হাজার মানুষের চাহিদার ৯০ শতাংশ খাদ্যসামগ্রী টেকনাফ থেকেই জোগান দিতে হয়।

আজ সকালে একটি ট্রলারে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাট থেকে টেকনাফে আসেন দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ১০ দিন আগেও তিনি ২৫০ টাকা ভাড়ায় টেকনাফ এসেছিলেন। এখন দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। আবার টেকনাফ থেকে ফিরতেও লাগবে ৩০০ টাকা। এত টাকা ভাড়া অসচ্ছল লোকজনের পক্ষে দেওয়া কঠিন।

বাজারপাড়ার ব্যবসায়ী সলিম উল্লাহ অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে স্পিডবোটে যাচ্ছিলেন টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ জন্য তাঁকে মাথাপিছু ভাড়া দিতে হয়েছে ৮৫০ টাকা করে। দুজনের জন্য দিতে হয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। তিনি বলেন, ১০ দিন আগেও স্পিডবোটের ভাড়া ছিল ৭০০ টাকা। জ্বালানি তেলে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে হঠাৎ করে অতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। ৩৪ কিলোমিটারের এই নৌপথে ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৭০ টাকা বাড়ানো যেত।

কয়েক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ৫০ জনের বেশি যাত্রী না হলে কোনো ট্রলার টেকনাফের দিকে ছাড়তে রাজি হয় না। অন্যদিকে স্পিডবোটেরও একই অবস্থা। ছয়জন ধারণক্ষমতার প্রতিটি স্পিডবোটে তোলা হয় ৯ থেকে ১০ জন। ভাড়াও আদায় হয় ইচ্ছেমতো। এই নৌপথে চলাচল করে ৩২টি স্পিডবোট ও ২০টির বেশি কাঠের ট্রলার।

সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সাগর এখনো উত্তাল। এ রকম পরিস্থিতিতে ট্রলার চলাচল নিরাপদ নয়। তবু ঝুঁকি নিয়ে কিছু ট্রলার চলছে। তেলের দাম বাড়ার কারণে ট্রলারচালকেরা জনপ্রতি ৫০ টাকা, মালামালের বস্তাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়ে আদায় করছেন।

সেন্ট মার্টিন বাজার কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খান বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে ট্রলার ও স্পিডবোটের ভাড়া অতিরিক্ত হারে আদায় করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ভাড়াও বাড়িয়ে আদায় করায় দ্বীপের হাটবাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ট্রলারভাড়া এবং পণ্যসামগ্রীর ভাড়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সেন্ট মার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রলার-স্পিডবোটের যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের জন্য ট্রলারমালিক, ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক সমিতি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ সংকটের নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।