মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জনের সুরতহাল করেছেন আবদুল্লাহেল বাকী। তিনি শিবচর হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই)। গতকাল রোববার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা, লাশ উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো, স্বজনদের নিয়ে লাশ শনাক্ত করা, রাত পর্যন্ত স্বজনদের কাছে লাশ হন্তার করার কাজগুলোও করেছেন তিনি। এত লাশ, স্বজনদের আহাজারির মধ্যে একটানা কাজ করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
এসআই আবদুল্লাহেল বাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত মানুষের লাশ একসঙ্গে আমি কখনো দেখিনি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও খুব স্থির থেকে ১৭ লাশের সুরতহাল করতে হয়েছে। আমার চাকরিজীবনে এটা অনেক বড় দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে। সুরতহাল করতে গিয়ে বারবার কেঁদেছি। প্রতিটি লাশের মাথায় আঘাত দেখেছি। মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। অনেকের হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।’
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল রোববার ভোররাতে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস খুলনার ফুলতলা থেকে ছেড়ে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে আসে। এরপর যাত্রী নিয়ে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পথে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ঢাকাগামী যাত্রী ওঠানো হয় বাসটিতে। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শিবচরের কুতুবপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। তখন বাসটি পাশের খাদে পড়লে ১৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই ১৭ জন নিহত হন। এই ১৭ লাশের সুরতহাল করেন এসআই আবদুল্লাহেল বাকী। বাকি দুজনের মৃত্যু হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এসআই আবদুল্লাহেল বাকী গত বছরের ২৪ এপ্রিল শিবচর হাইওয়ে থানায় যোগ দেন। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার চারালকান্দি গ্রামের ছেলে বাকী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। পদায়ন হয় হাইওয়ে পুলিশে।
আবদুল্লাহেল বাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসের বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। অতিরিক্ত গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি উড়ে নিচে আন্ডারপাসের দেয়ালে ধাক্কা খায়। এ কারণে নিহত ব্যক্তিদের সবার মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। সুরতহাল শেষ করে ক্ষত-বিক্ষত মরদেহগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে স্বজনেরা ছুটে আসেন। একে একে তাঁদের কাছে লাশ বুঝিয়ে দিই। এত মানুষের আহাজারি আর কখনো দেখিনি। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আজ কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না।’
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু নাঈম প্রথম আলোকে বলেন, ইমাদ পরিবহনের বাস দুর্ঘটনাটি এক্সপ্রেসওয়েতে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে লাশের সুরতহাল, লাশ হস্তান্তর করার কাজগুলো অন্যদের সঙ্গে এসআই আবদুল্লাহেল বাকীকে করতে হয়েছে। দিনভর মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন।