নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে এবার শিবির নেতা দাবি করে ছাত্রলীগের মানববন্ধন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের শিক্ষার্থীকে শিবির নেতা দাবি করে ছাত্রলীগের একাংশ মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায়
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে রাতভর নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদকে এবার শিবির নেতা দাবি করে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বক্তারা পুরো ঘটনাকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন।

বক্তারা বলেন, আহত দাবি করা শিক্ষার্থীর বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ, হলের পাঁচ শতাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর কেউই ওই শিক্ষার্থীর বর্ণনানুযায়ী কোনো ঘটনা ওই দিন রাতে ঘটতে দেখেননি এবং শোনেননি। মূলত মুকুল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিতর্কিত করতে পরিকল্পিতভাবে ওই ঘটনার জন্ম দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান ওরফে তমাল, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, প্রক্টর, রেজিস্ট্রার এবং বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, কোনো গোষ্ঠী বা মহল যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না করতে পারে, সে ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বোঝা যাবে, অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা।

তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত এগোচ্ছে না। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির একজন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রিফাত ফেরদৌস। গতকাল বুধবার তিনি জানান, পারিবারিক একটি কাজে তিনি ছুটিতে আছেন। আগামী সপ্তাহে (রোববার) তদন্তসংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি জানার চেষ্টা করবেন।

১২ অক্টোবর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে মুকুলকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। পিটিয়ে তাঁর বাঁ হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আহত মুকুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানজীদ মঞ্জু ও সিহাব উদ্দিন এ নির্যাতন চালিয়েছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা।

অভিযোগ পাওয়ার পর যে কক্ষে আটকে মুকুলকে নির্যাতন করা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল কর্তৃপক্ষ সেটি সিলগালা করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টিউশনি করে তিনি হলে ফিরছিলেন। পথে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয় ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের কয়েকজন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। মুকুল তাঁদের কাছে জানতে চান, রাতে তাঁরা ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন কেন। ওই শিক্ষার্থীরা জানান, দশম ব্যাচের (দ্বিতীয় বর্ষ) বড় ভাইয়েরা বঙ্গবন্ধু হলে ডেকেছেন। পরে মুকুল হলে ফিরে তাঁদের দশম ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে একটি বার্তা দেন এবং লেখেন, ‘আমাদের ব্যাচের নামে ছোট ভাইদের ডাকা হয়েছে, অথচ আমরা জানি না। আগেও এভাবে ডেকে র‌্যাগিং করা হয়েছে অনেককে। তখন বিভাগের শিক্ষকদের কাছে আমাদের কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। এখন আবার ডাকা হয়েছে, আমরা জানি না, এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই না।’

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুকুল
ছবি: প্রথম আলো

মুকুল বলেন, এই কথা লেখার এক মিনিট যেতে না যেতেই তানজীদ মঞ্জু তাঁকে ফোন করে শেরেবাংলা হলের দিকে যেতে বলেন। এশার নামাজের শেষে যাওয়ার কথা বললে তখনই তাঁকে যেতে বলা হয়। রাত আটটার দিকে মুকুল বঙ্গবন্ধু হলের পাঁচতলার নিজের কক্ষ থেকে চতুর্থ তলায় নামতেই তানজীদের সঙ্গে দেখা হয় এবং সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ তলার ৪০১৮ নম্বর কক্ষে। সেখানেই নিয়ে কক্ষের সবাইকে বের করে দিয়ে কক্ষটি আটকে দেন তানজীদ। কেন মেসেঞ্জার গ্রুপে ওই বার্তা দিয়েছেন, তার কৈফিয়ত জানতে চান। এ সময় তানজীদ বলেন, ‍‘তোর জন্য আমি একাদশ ব্যাচটাকে গোছাতে পারছি না।’ এসব বলেই শুরু করেন নির্যাতন। মঞ্জু ও তাঁর সহযোগী সিহাব তাঁকে উপর্যুপরি কিলঘুষি, লাথি এবং একপর্যায়ে জিআই পাইপ, চেয়ারের ভাঙা কাঠের হাতল দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারালে রাত তিনটার দিকে ওই কক্ষে ফেলে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে তাঁরা চলে যান। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়।

আরও পড়ুন

১৬ অক্টোবর মুকুল আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) পাঠানো হয়।

অভিযুক্ত তানজীদ মঞ্জুর দাবি, ‘ওই ছেলে (মুকুল) নীরবে শিবির করে। আমার ছোট ভাইদের বলেছিলাম, ওকে ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করার জন্য। আমার ছোট ভাইয়েরা ছেলেটিকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে মাত্র। মারধর করেনি। কোথাও পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে গেছে, এখন আমাকে ফাঁসানোর জন্য সেটা ব্যবহার করছে।’

আরও পড়ুন