৩৩৫ রোগীকে চিকিৎসাপত্র দেওয়ার পর জানা গেল তিনি ভুয়া চিকিৎসক

নেত্রকোনার মদনে আটক ভুয়া চিকিৎসক শংকর দাসছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার মদনে শংকর দাস (২৬) নামের এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে। তিনি নিজের নাম–পরিচয় গোপন করে সাধন কুমার মণ্ডল নামে এক চিকিৎসকের নাম, পরিচয়, সনদ ও রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে দুই মাস ধরে রোগী দেখছিলেন। এই সময়ে তিনি ৩৩৫ জনকে চিকিৎসাপত্র দেন।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পৌরসভার স্বদেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তখন শংকর দাসকে আটক করা হয়।

ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সাধন কুমার মণ্ডলের পরিচয়ে গত ৭ মার্চ থেকে মদনের স্বদেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখছিলেন শংকর দাস। শুধু নাম নয়; চিকিৎসক সাধন কুমারের ডিগ্রি ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নম্বরও ব্যবহার করতেন তিনি। গত দুই মাসে তিনি ৩৩৫ রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছেন। প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ২০০ টাকা ভিজিট নিয়েছেন। একপর্যায়ে বিষয়টি প্রকৃত চিকিৎসক সাধন কুমার মণ্ডলের কানে যায়। সাধন কুমার বর্তমানে খুলনার একটি হাসপাতালে চাকরি করেন।

সাধন কুমার মণ্ডল স্বদেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান। শুক্রবার রাতে তিনি প্রতারণার বিষয়টি মদনের ইউএনওকে জানান। গতকাল স্বদেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে তিনি দেখেন, চিকিৎসক সাধন কুমার মণ্ডলের পরিচয়ে সেখানে যিনি রোগী দেখছেন, তাঁর প্রকৃত নাম শংকর দাস।

আটকের পর শংকর দাসকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অভিযুক্ত শংকর দাস টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা সদরের সুমেশ দাসের ছেলে।

অভিযুক্ত শংকর দাসের দাবি, তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্র। তবে কোন মেডিকেল কলেজের, তা বলেননি। তাঁর টাকার সমস্যা ছিল। তাই ভুয়া পদবি ও ঠিকানা ব্যবহার করে এমন কাজ করেছেন।

স্বদেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘ডাক্তার সাধন কুমার মণ্ডলের পরিচয় দিয়ে আমার ক্লিনিকে শংকর দাস রোগী দেখেছেন। এখন জানতে পারলাম, তিনি একজন ভুয়া চিকিৎসক ও প্রতারক। আমরা তাঁর প্রতারণার শিকার হয়েছি।’

মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তায়েব হোসেন বলেন, আটক ব্যক্তি কোনো চিকিৎসক নন। তিনি মূলত একজন প্রতারক। তাঁর কথায় বিষয়টি প্রমাণিত।

ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শংকর দাস তাঁর অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রকৃত সনদধারী মামলা করবেন।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি সরকার বলেন, সাধন কুমারের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।