ভোলায় বাসশ্রমিক ও অটোরিকশার চালকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, বাস চলাচল বন্ধ
ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল থেকে অটোরিকশার স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাসশ্রমিক ও অটোরিকশার চালকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এর জেরে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
এই সংঘর্ষে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ২টি বাস ও ৯টি অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ১০টি বাস ও ৩টি মাহিন্দ্র। গতকাল রাত ১০টার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আজ সকাল থেকে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল।
এ ঘটনার জেরে আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাস মালিক সমিতি বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর ফলে ভোলা থেকে চরফ্যাশন, তজুমদ্দিন ও ইলিশা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালের ডিপোপ্রধান ও জেলা বাস মালিক সমিতির নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বলেন, পৌরসভার কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকায় বাস টার্মিনাল ইজারা নিয়েছে বাস মালিক সমিতি। গতকাল পৌরসভা তাদের বাসস্ট্যান্ডের তদারকি ও মালিকানা বুঝিয়ে দেয়। সেখান থেকে অবৈধ অটোরিকশার স্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে বিক্ষুব্ধ অটোরিকশাচালক ও শ্রমিকেরা রাতের বেলায় তাঁদের বাসে আগুন দেন এবং এ থেকেই সংঘর্ষের শুরু।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরের দিকে ভোলা পৌর কর্তৃপক্ষ বাস টার্মিনাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায়। এ সময় প্রশাসনের লোকজন অটোরিকশাচালকদের বাস ডিপো থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু চালকেরা সেখান থেকে বেরিয়ে যাননি। সন্ধ্যায় বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে অটোরিকশাচালকদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ সম্পর্কে অটোরিকশাচালক মো. ছালাউদ্দিন ও আক্তার হোসেন বলেন, ২০০০ সাল থেকে অটোরিকশার চালকেরা ভোলা বাস টার্মিনালের ডিপোর মধ্যেই আছেন। গতকাল বাস মালিক সমিতির লোকজন তাঁদের ডিপো থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরে বাস মালিক সমিতির লোকজন ডিপোর মধ্যে বাস দিয়ে চার থেকে পাঁচটি অটোরিকশা চাপা দেন এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। বাসের শ্রমিকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অটোরিকশার কয়েকজন চালক আহত হন।
আজ সকালে বাস টার্মিনাল এলাকায় আবার দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পুলিশের সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার সেখানে ৪টি অটোরিকশায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভান। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে র্যাব, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আসেন। দুপুর ১২টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকার জানান, গতকাল রাতে অটোরিকশাচালক ও বাসশ্রমিকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।