পাহাড়-সাগর মিলেছে যেখানে

চারদিকে সবুজ বৃক্ষরাজি। মাঝে বয়ে যাওয়া সর্পিল হ্রদের ওপর ঝুলন্ত সেতু। দর্শনার্থীর মুগ্ধ হওয়ার সব রসদ আছে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কেছবি: জুয়েল শীল

ভ্রমণ নিয়ে রোমান দার্শনিক সেনেকার একটি বিখ্যাত উক্তি মাঝেমধ্যেই এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়। বহু বছর আগে তিনি বলেছিলেন, ভ্রমণ ও স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে মনের মধ্যে নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার হয়। আসলেই তা–ই। ক্লান্তি দূর করতে অনেকেই এদিক-সেদিক ছুটতে চান। কিন্তু কর্মব্যস্ততায় তা সম্ভব হয় না।
এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পাহাড়, হ্রদ, সমুদ্রসৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের ইচ্ছা যাঁদের আছে, তাঁদের জন্য চট্টগ্রাম শহরটাই হতে পারে প্রথম পছন্দ। এই পুরোনো শহরের পথে পথে পাহাড়। আর একটু দূরে দৃষ্টি রাখলেই সমুদ্র দেখা যায়। তাই হব হব করেও যাঁদের ভ্রমণে বের হওয়া হচ্ছিল না, এই ছুটিতে তাঁরা ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক, ডিসি পার্ক, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, ভাটিয়ারি হ্রদ, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, জাম্বুরি পার্ক, স্বাধীনতা পার্কে। গহিন পাহাড়েও ছুটে যেতে পারেন। শহরলাগোয়া কাপ্তাই হ্রদের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়েছে সবুজ পাহাড়। যেখানে মেঘের ওড়াউড়ি চলে সারা বর্ষায়।

অ্যামিউজমেন্ট পার্ক

শুরুতে শহরের দিকে চোখ রাখা যাক। পাহাড়ের সবুজ বৃক্ষরাজিতে হারিয়ে যেতে কিংবা হ্রদের স্বচ্ছ জলে ঘুরে বেড়াতে যেতে পারেন ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে। এবার এ বিনোদনকেন্দ্রের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো বেজক্যাম্প। এতে রয়েছে ‘ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি’, ‘অন গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি, ‘টিম বিল্ডিং গেম’, ‘কায়াকিং’সহ রোমাঞ্চকর নানা আয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের দিন বেলা দেড়টা থেকে রাত আটটা ও অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই বিনোদনকেন্দ্র। শিশু-কিশোরদের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের গেম শো। ছয়টি রাইডে চড়াসহ ফয়’স লেকে প্রবেশ, দুপুর বা রাতের খাবারসহ জনপ্রতি গুনতে হবে ৮০০ টাকা।
কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে অনেক দর্শনার্থী সময় কাটাতে আসেন ফয়’স লেক ও ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ডে। তাই ঈদ উপলক্ষে থাকবে নানা আয়োজন। থাকবে প্যাকেজও।

এবার ছুটিতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ হতে পারে বাঘের তিন শাবক
ছবি: প্রথম আলো

চিড়িয়াখানা

ফয়’স লেকের গা ঘেঁষেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে চিড়িয়াখানায় ঘুরলে দেখা মিলবে বাঘ, হরিণ, সিংহ, ময়ূর, কুমিরসহ ৭০ প্রজাতির ৫২০ পশুপাখি। তবে এই ঈদের বিশেষ আকর্ষণ হলো বাঘ জো বাইডেন ও বাঘিনী জয়ার পরিবারের নতুন তিন সদস্য। মায়াবী তিন বাঘশাবকের নামও রাখা হয়েছে। সম্রাজ্ঞী, তেজস্বিনী ও বিজয়িনী নামের তিন বাঘশাবককে দেখতে ইতিমধ্যে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। ফলে ঈদে অনেক মানুষের মেলা বসবে—এ ধারণা করাই যায়।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর মো. শাহাদাত হোসেন জানালেন, ঈদের ছুটিতে সন্তানদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসেন দর্শনার্থীরা। চিড়িয়াখানার সাজসজ্জা থেকে পরিচ্ছন্নতা—সবকিছুতেই ঈদের ছোঁয়া লেগেছে। জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ৭০ টাকা।

পতেঙ্গা থেকে ডিসি পার্ক

শহরের দক্ষিণ প্রান্তের শেষে গেলেই সৈকতের সৌন্দর্যে ডুব দেওয়া যাবে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত নামের এই স্থান এখন পর্যটকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। ছুটির দিনে শত শত মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে থাকে সৈকতটি। কাঁকড়া ফ্রাই, ঝালমুড়ি, ফিশ ফ্রাইসহ নানা খাবারও চেখে দেখা যায় এই সৈকতে। ঈদের ছুটিতে তাই পতেঙ্গা সৈকতে বসে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পারেন।
মূল শহর থেকে দুইভাবে যাওয়া যায় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। মুরাদপুর থেকে আগ্রাবাদ, বন্দর, ইপিজেডের সোজা সড়ক ধরে সৈকতে পৌঁছানো যায়। আবার ফৌজদারহাট কিংবা হালিশহর ধরে মেরিন ড্রাইভ সড়কের মাধ্যমে সহজেই চলে যাওয়া যায় সমুদ্রসৈকতে। পথে যেতে যেতে উপভোগ করা যায় ঢেউয়ের অপূর্ব মিতালি।
সৈকতে যাঁরা ঘুরতে যাবেন, তাঁরা তালিকায় ডিসি পার্কের নামও টুকে রাখতে পারেন। সৈকতের এক প্রান্তে সীতাকুণ্ড উপজেলায় চট্টগ্রাম ডিসি পার্কের অবস্থান। দেশি-বিদেশি নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পার্কটি। ১২৭ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুলের চারা রাখা হয়েছে এই পার্কে। সাগরপারে ১৯৪ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বাগানে থাকবে কায়াকিং, নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, শিশুদের নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডে চড়ার সুযোগ। টিকিট মাত্র ৩০ টাকা।
এ ছাড়া শহরের উত্তর প্রান্তের ভাটিয়ারিতে একই সঙ্গে পাহাড়, হ্রদ ও পার্কে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া শেষ বিকেলে পাহাড়ের ‘সানসেট পয়েন্টে’ দাঁড়িয়ে দেখা যাবে টকটক লাল সূর্যের অস্ত যাওয়ার অপূর্ব দৃশ্য।

শহর থেকে খানিক দূরে

এ তো গেল শহরের ভেতরের বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রের কথা। কেউ শহর থেকে একটু দূরে যেতে চাইলে বিবেচনায় নিতে পারেন কয়েকটি নাম। যেমন কাপ্তাই হ্রদ, মিরসরাইয়ের বাওয়াছড়া লেক, সোনাইছড়ি ট্রেইল, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, পার্কি সমুদ্রসৈকত, গুলিয়াখালী সৈকত, মহামায়া লেক। কম খরচে স্বল্প সময়ে এসব দর্শনীয় স্থানে ঘুরে আসা যাবে। ঈদের ছুটিটা কাটানো যাবে পরম আনন্দে।