গাছগাছালিতে ঘেরা এই দিঘিতে প্রতিবছর শীত মৌসুমে ভিড় করে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। এসব পাখি দেখতে দেশের নানা স্থান থেকে ভিড় করেন পর্যটকেরা।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা সদরের জলিলনগর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রায় ৪০ একরের এই দিঘি। লস্কর উজির দিঘি নামে পরিচিত এ জলাশয়টি সব সময় মুখর থাকে পাখির কিচিরমিচিরে। গাছগাছালিতে ঘেরা এই দিঘিতে প্রতিবছর শীত মৌসুমে ভিড় করে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। এসব পাখি দেখতে দেশের নানা স্থান থেকে ভিড় করেন পর্যটকেরা।

গত মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিঘিটির উত্তর ও পশ্চিম পাড়ের অধিকাংশ গাছ এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। দিঘির পশ্চিম পাড়ে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নতুন করে গাছ কাটছেন। দিঘির পাড়েই কাটা গাছগুলো খণ্ড খণ্ড করে একাধিক সারিতে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।

শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবসার মুরাদ এবং রাউজান উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমানের নির্দেশে গাছগুলো কাটছেন।

দিঘির যে দুটি পাড়ের গাছ কাটা হয়েছে সেখানে শ্রমিকদের বাইরে কাউকে চোখে পড়েনি। তবে পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে গাছের ছায়ায় বসে থাকতে দেখা যায় অনেককে। সেখানে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে।

তাঁরা জানান, মুহাম্মদ নুরুন্নবী নামের একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে দিঘির পাড়ের গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। গাছ বিক্রির কাজে উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান তাঁর ভাই মুহাম্মদ হোসেন ও মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকেও জড়িয়েছেন। গাছগুলোর প্রায় প্রতিটিই অন্তত ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী।
কেটে ফেলা গাছের ডালপালা স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে ।

গাছ কেটে ফেলায় ঐতিহ্যবাহী দিঘিটির সৌন্দর্যহানি হয়েছে। পাড়ে থাকা গাছের বিষয়ে আমার কিছু বলার সুযোগ নেই
মুহাম্মদ ইদ্রিস, স্থানীয় বাসিন্দা

দিঘিটি জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি বলেন, ‘গাছ কেটে ফেলায় ঐতিহ্যবাহী দিঘিটির সৌন্দর্যহানি হয়েছে। পাড়ে থাকা গাছের বিষয়ে আমার কিছু বলার সুযোগ নেই।’

জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান ও স্থানীয় ইউপির সদস্য আবসার মুরাদ বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর নির্দেশে গাছ কাটার বিষয়টি তাঁরা তদারকি করছেন। স্থানীয় জনগণের সুবিধার্থে একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্দেশ্যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে।

কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দিঘিটির উত্তর ও পশ্চিম পাড় ঘেঁষে একটি সড়ক করা হবে। তাই কিছু মরা গাছ কাটা হয়েছে। সেখানে নতুন করে বনায়ন করা হবে।
গাছ কাটার অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, খাস জায়গা হলেও গাছগুলো যাঁরা রোপণ করেছিলেন, তাঁরাই কেটেছেন। অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, দিঘির পাড়ের গাছগুলোর মালিক সরকার। গাছ কাটার বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বন বিভাগের রাউজানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পল্লব কুমার সাহা বলেন, সরকারি জায়গা বা নিজস্ব জায়গায় লাগানো গাছের সংখ্যা বেশি হলে সেগুলো একসঙ্গে কাটার আগে অবশ্যই বনবিভাগের কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করতে হবে। এরপর সেটি সংশ্লিষ্ট উপজেলার সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করতে হবে। সেখান থেকে সুপারিশ করা হলে তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর অনুমতি মিললে তারপর গাছ কাটা যেতে পারে। উপজেলার কদলপুরের পুরোনো লস্কর উজির দিঘির পাড়ের গাছ কাটার ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানেন না। তাঁর কাছ থেকে গাছ কাটার বিষয়ে অনুমতি চাননি কেউ। এভাবে এতগুলো গাছ এক সঙ্গে কেটে ফেলা বেআইনি। এতে ওই এলাকা এবং দিঘির মারাত্মক ক্ষতি হবে।

তিনি আরও বলেন, আজ শনিবার সরেজমিন দিঘিটি পরিদর্শন করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিবেন তিনি।