স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে

বরিশালে নগরের বান্দরোডের একটি হোটেলে রোববার স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ক বিভাগীয় সংলাপ আয়োজন করা হয়ছবি: প্রথম আলো

দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক দুর্বলতা, আর্থিক সংকট ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ কাঠামোগত ও প্রশাসনিক জটিলতায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ছাড়া জেলা পরিষদের ভূমিকা সম্পর্কে জনসাধারণের স্পষ্ট ধারণা নেই। ফলে এ প্রতিষ্ঠানও জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার করা হলে জনগণের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে ও গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।

রোববার সকাল ১০টায় বরিশাল নগরের বান্দরোডের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জন–আকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’—শীর্ষক বিভাগীয় সংলাপে অতিথিদের বক্তব্যে এ মতামত উঠে এসেছে। গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও ইউএনডিপির যৌথ আয়োজনে এবং এসডিসির সহযোগিতায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় সরকার সংস্কারবিষয়ক এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার জাহিদ। এটি সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কানিজ ফাতেমা। এতে  স্বাগত বক্তব্য দেন গভর্ন্যান্স কোয়ালিশনের প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের ফ্যাসিলিটেটর অনিরুদ্ধ রায়। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উন্নয়ন সংগঠক শুভঙ্কর চক্রবর্তী। সংলাপে স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, নারী নেতা, পেশাজীবী, উন্নয়নকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্র প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, দলিত, হিজড়া ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।

সংলাপের মূল প্রবন্ধে অনিরুদ্ধ রায় স্থানীয় সরকারব্যবস্থার ছয়টি প্রধান সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করেন। এগুলো হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীকরণ; আর্থিক সীমাবদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ; জেন্ডার ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সীমিত সুযোগ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সংলাপে যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা ৯ থেকে ১২-তে উন্নীত করা, উপজেলা পরিষদে সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা রাখার বিধান বাতিল করা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে জেলা পরিষদে রূপান্তর করা এবং একজন জেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়ে পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া; স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া ও নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করা, স্থানীয় সরকারের বাজেট বণ্টন কাঠামো নির্ধারণ করা ও রাজস্ব ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, সব স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত পরিষদের কাছে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা; ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা চালু করা এবং ওয়েবভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা; স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে একটি স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন।

আয়োজকেরা জানান, সংলাপে গৃহীত এসব নাগরিক সুপারিশ স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কাছে পাঠানো হবে এবং এসব সুপারিশের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গঠনের জন্য সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দেবে।