নিহত স্কুলশিক্ষক মাহমুদা আক্তার ও জিয়াউর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

তাঁদের কেউ ছাত্র, কেউ সহকর্মী, কেউবা দীর্ঘদিনের পরিচিত। লাশ উদ্ধারের খবরের পর থেকেই তাঁরা শোকার্ত। প্রিয় শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুক পোস্টে স্মৃতিচারণার পাশাপাশি জানাচ্ছেন নিজেদের ভালোবাসার কথা; দাবি করছেন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের।

এই শিক্ষকেরা হলেন এ কে এম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার। জিয়াউর রহমান ছিলেন গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আর মাহমুদা আক্তার টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে গাজীপুরের খাইলকৈর বগারটেক এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ফেসবুকে সরব হয়ে ওঠেন তাঁদের সাবেক ও বর্তমান অসংখ্য শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

আরও পড়ুন

গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্যের জট খোলেনি, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ

টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল চৌধুরী গতকাল সকালে তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমার স্কুলজীবনের প্রিয় শিক্ষক জনাব জিয়াউর রহমান স্যার ও তাঁর সহধর্মিণী জলি আপুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি, যেন আর কোনো শিক্ষকের এমন পরিণতি না হয়।’

গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে আরিফুল ইসলাম নামের একজন লেখেন, ‘আমি যত দূর জানি স্যারের কোনো শত্রু ছিল না। স্যার ছিলেন খুবই সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তারপরও কেন স্যারের এমন পরিণতি হলো, বুঝতে পারছি না। স্যারের একটিমাত্র ছেলে। তাঁর এই দুনিয়াতে আপন বলতে কেউ রইল না। স্যারের কথা ভাবতেই কষ্ট লাগছে। প্রশাসনের কাছে আমরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই।’

আরও পড়ুন

‘সবাই আমারে ছাইড়্যা চইল্যা গেছে, আমি একা হইয়্যা গেলাম’

জিয়াউর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধারের খবরের পর শোকের ছায়া নেমে আসে তাঁদের কর্মস্থল শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় ও আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। গতকাল সরকারি ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকার পরও খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে আসেন তাঁদের সহকর্মী শিক্ষক ও অন্যরা।

শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জিয়াউর রহমান বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তাঁর আগে তিনি ছিলেন কালীগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে। তিনি গণিত পড়াতেন। তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তারও পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর তাঁরা একসঙ্গে বাসায় যেতেন।

নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ৪৩ শিক্ষকের মধ্যে স্যার ছিলেন সবচেয়ে আলাদা। সবচেয়ে মিশুক ও নরম স্বভাবের মানুষ। কিন্তু তারপরও কেন স্যারের এমন পরিণতি তা বুঝতে পারছি না। এ ঘটনায় আমরা শিক্ষকেরা মর্মাহত। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।’