নারায়ণগঞ্জে যুবলীগ নেতা ও মহিলা লীগ নেত্রীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধ

নারায়ণগঞ্জ জেলার মানচিত্র

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে যুবলীগ নেতা ও মহিলা লীগ নেত্রীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক যুবলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ উপজেলা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ ওই যুবলীগ নেতার নাম শরীফ সিকদার (৪২)। তিনি মুড়াপাড়া মাহমুদাবাদ এলাকার মৃত দেলোয়ার শিকদারের ছেলে ও মুড়াপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি তাওলাদ হোসেনের অনুসারী যুবলীগ নেতা। আহত অবস্থায় গতকাল রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দুই বাসিন্দা, পুলিশ ও স্থানীয় তিনজন যুবলীগ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, শরীফ সিকদার, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ওরফে পাভেল, সভাপতি তাওলাদ হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য মনির হোসেন এক বলয়ের রাজনীতি করেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রেহানা আক্তারের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জেরে গত এক বছরে দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত চারটি বড় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

গত ৩০ মে রেহানা আক্তারের আত্মীয় ফয়সাল প্রধান ও মো. সোহানের সঙ্গে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা আশিকুর রহমান ও শরীফ সিকদারের বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে গতকাল সন্ধ্যায় ফয়সাল প্রধান ও সোহানের নেতৃত্বে রেহানা আক্তারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মো. সোহাগ, মো. রনি, মো. রাজন, মো. দিপু, কাউসারসহ ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল উপজেলা এলাকায় একটি সালিসে অংশ নিতে আসেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে শরীফ সিকদার গুলিবিদ্ধ হন।

শরীফ সিকদারকে নিজের কর্মী দাবি করে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তাওলাদ হোসেন অভিযোগ করেন, রেহানা আক্তার ও তাঁর ভাইয়ের ছেলেরা রূপগঞ্জে মাদকের বড় সিন্ডিকেট। যুবলীগের ছেলেরা তাঁর মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার  কারণেই গুলির ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুড়াপাড়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, রেহানা আক্তারের লোকজনের একটি মাদকের চালান আটকের ঘটনা ঘটেছিল কিছুদিন আগে। এর জেরে দুই পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষের সময় অন্তত ১০ জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

এ বিষয়ে রেহানা আক্তারকে কল করলে গতকাল রাত ১১টার দিকে তিনি বলেন, ‘ওসি স্যার আমার সামনে আছেন। আমার যদি এমন গ্রুপ পান...।’ এরপর ফোনের সংযোগ কেটে যায়। তিনি আর কল ধরেননি।

নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গোষ্ঠীগত প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলিসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। এই চারজন হলেন মো. ছাব্বির(২১), রমজান আলী (৩৪), শাওন মিয়া (২৪) ও আবদুল হামিদ (১৯)। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।