সাভারে রাত আটটা পর্যন্ত ট্যানারিতে এল ৮৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া

সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরে ট্রাকে করে আনা হচ্ছে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকেছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করেছে ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় অবস্থিত বিসিক চামড়াশিল্প নগরের ট্যানারিগুলোতে। আজ রাত আটটা পর্যন্ত ৩৫৪টি ট্রাকে এ শিল্পনগরীতে মোট ৮৪ হাজার ৮৫৭টি কাঁচা চামড়া এসেছে।

এ তথ্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বিসিক চামড়াশিল্প নগরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহরাজুল মাঈয়ান। তিনি বলেন, এবার চামড়াশিল্প নগরে চামড়াবাহী ট্রাকগুলোর প্রবেশে শৃঙ্খলা রক্ষায় হরিণধরা এলাকা থেকে চামড়াশিল্প নগর পর্যন্ত একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিসিক, জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। দিন ও রাতে দুই পালায় ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এ ছাড়া এক ঘণ্টা পরপর তিনি নিজে উপস্থিত থেকে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

আজ দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ট্যানারিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ট্রাক ও পিকআপে করে আসা কাঁচা চামড়া নামিয়ে গণনা করে ভেতরে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। পরে চামড়া থেকে লেজ ও মাথার অংশ কেটে আলাদা করা হয়। এরপর প্রতিটি চামড়ায় লবণ দিয়ে তা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।

আজমীর লেদারে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদে অনেক ব্যস্ততা থাকে। চামড়ায় লবণ লাগানোর কাজে প্রতিটি চামড়ার জন্য ৪০-৫০ টাকা দেওয়া হয়।

ট্যানারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কোরবানির পশুর মাথার চামড়া সংগ্রহ করেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাথার চামড়া প্রতিটি তিন টাকা হিসেবে কিনি। ঈদের মধ্যে দিন-রাত কাজ করতে হয়। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছি না, খারাপ লাগে। তবে সবাই মিলে কাজ করার আনন্দও আছে।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘এবার আমাদের প্রায় এক কোটি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আছে। হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরীতে আজ শনিবার ও কাল রোববার দুই দিনে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হবে।’

মো. সাখাওয়াত উল্লাহ আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে চামড়ায় দেরিতে লবণ দেওয়া হলে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। যাঁরা চামড়া সংগ্রহ করছেন তাঁদের কোরবানির পর দ্রুত সময়ের মধ্যে চামড়া বিক্রিসহ লবণজাত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় চামড়া নষ্ট হয়ে এর গুণগত মান হারাবে, এতে চামড়ার দাম কম পাবেন। এ ছাড়া চামড়া নষ্ট হয়ে বিক্রির অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে।’

এদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান চামড়াশিল্প নগরের বিভিন্ন ট্যানারির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি নানা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির বিষয়টি একটা সময় উন্মুক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে এটি বন্ধ করা হয়েছিল দেশের স্বার্থেই। এখন আবার দেশের স্বার্থেই যদি দাম পাওয়া না যায়, তাহলে সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে নিয়ে ওই চামড়া আমরা যদি দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারি তাহলে তার সঠিক দাম পাওয়া যাবে। এ জন্য কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়টি বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে।’

প্রয়োজন হলেই কেবল এটি করা হবে জানিয়ে সচিব মো. ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, ‘পরিবেশদূষণ রোধে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দূষণ হবে না।’