বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক, স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস

জয়পুরহাট সদর উপজেলার সৌলাগাড়ী বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক। গতকাল বৃহস্পতিবার ভুটিয়াপাড়া শূন্যরেখায়
ছবি: প্রথম আলো

সীমান্তঘেঁষা জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের সৌলাগাড়ী বিলের ৪ হাজার বিঘা জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বিএসএফের প্রতিনিধিদল।

বিজিবি-১৪ পত্নীতলা ব্যাটেলিয়নের অধীন ভুটিয়াপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের শূন্যরেখায় গতকাল সকালে এ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজিবি-১৪ পত্নীতলা ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল হামিদ উদ্দিন ও ১৩৭ বিএসএফ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক সুখবীর ডাঙ্গর পতাকা বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই বিলের পানিনিষ্কাশনের জন্য ভারত অংশের খালটি প্রশস্ত ও গভীর খননের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিএসএফ।

এলাকাবাসী ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ভুটিয়াপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের ২৭৪ থেকে ২৭৬ সীমানা পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে ভারতের অংশে একটি খাল রয়েছে। সৌলাগাড়ী বিলের পানি ভারতের খালে প্রবাহিত হয়ে আসছিল। ১০ বছর আগে ওই খালের পাশে বিএসএফ আরকেপুর ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর খালে কয়েকটি বাঁধ দেয় বিএসএফ। এতে সৌলাগাড়ী বিলের পানিনিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে বর্ষা মৌসুমে বিলের ফসলি মাঠে পানি জমে থাকে। ওই বিলের ফসলি মাঠে খদিপাড়া, কৈকুড়ি, রামকৃষ্ণপুর ও ধলাহার গ্রামের হাজারো কৃষকের প্রায় চার হাজার বিঘা জমি রয়েছে।

সৌলাগাড়ী বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে বৈঠকের পর ভারতের খালটি পরির্দশন করেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল বৃহস্পতিবার জয়পুরহাট সীমান্তের ভুটিয়াপাড়া শূন্যরেখা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে কৃষকেরা তাঁদের জমিতে আবাদ করেছিলেন। গত আগস্টে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ফসলি মাঠটির প্রায় চার হাজার বিঘা জমির ধানখেত পানিতে ডুবে যায়। এলাকাবাসী খালের বাঁধ কাটতে গিয়ে ফিরে আসেন। এরপর ফসলি মাঠের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বিজিবি-১৪, পত্নীতলা ব্যাটেলিয়নে বিষয়টি জানান।

পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হামিদ উদ্দিন বলেছেন, সৌলাগাড়ী বিলের ফসলি খেত পানিতে ডুবে থাকার বিষয়টি বিএসএফকে জানানোর পর তারা খালের মুখ পরিষ্কার করেছে। ভারত অংশের খালটি খনন করে প্রশস্ত করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান হবে। পতাকা বৈঠকে বিএসএফের প্রতিনিধিদল জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই স্থায়ী সমাধান হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

পতাকা বৈঠকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন, জয়পুরহাট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে ওয়াহিদ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আশিকুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিয়া জাহান, উপজেলা প্রকৌশলী শামীম ফুয়াদ, জয়পুরহাট আদালতের সরকারি কোঁসুলি নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল, ধলাহার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

কৈকুড়ি গ্রামের কৃষক আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেছেন, এবার টানা বর্ষণে বিলের ফসলি মাঠ (রোপা আমন) পানিতে ডুবে ছিল। বিএসএফ খালের মুখ কেটে দেওয়ায় পানি দ্রুত সরে গেছে, তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতিবছর একই অবস্থা হবে।