প্রায় ১০ বছর আগেও সেখানে সকাল-বিকেল চলত ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলা। সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় ছোট–বড় সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিকসহ সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন পানিনিষ্কাশনের নালার (ড্রেনেজ) ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সারা বছরই সেই মাঠে জমে থাকে বৃষ্টির পানি। সেখানে ফুটেছে কচুরিপানার ফুল।
এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা পরিষদের খেলার মাঠ। উপজেলা পরিষদ থেকে ২০০ গজ উত্তরে দুর্গাপুর এলাকায় এই মাঠের অবস্থান। মাঠের উত্তর প্রান্তে রয়েছে দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দক্ষিণ–পশ্চিমে রয়েছে কুমারখালী আদর্শ মহিলা বিদ্যালয় ও আবুল হোসেন তরুণ মিলনায়তন। এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হতো উপজেলার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত। নানা বয়সী মানুষ ব্যায়াম করার জন্য ভিড় জমাতেন এখানেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা অপসারণ ও সংস্কার না হওয়ায় কাজেই আসছে না মাঠটি।
এটি উপজেলা পরিষদের খেলার মাঠ। পরিষদ থেকে ২০০ গজ উত্তরে দুর্গাপুর এলাকায় এই মাঠের অবস্থান।
এ সম্পর্কে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান খান বলেন, অতীতে মাঠে দু–তিন মাস পানি থাকত। এখন অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ১২ মাসই পানি জমে থাকে। পরিষদে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সংস্কার হয়নি। তবে এবার বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে মাঠ সংস্কার করা হবে। আবার খেলা হবে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা পরিষদের একমাত্র খেলার মাঠটি সংস্কার না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে সব কার্যক্রম। সুনসান হয়ে আছে খেলার মাঠ। পুরো স্থানেই পানি জমে আছে। আর বড় বড় দূর্বাজাতীয় ঘাস ও আগাছায় ভরে গেছে। মাঠের একাধিক স্থানে জন্মেছে কচুরিপানা। কচুরিপানায় ফুটেছে সাদা ফুল। মাঠে বিচরণ করে গবাদিপশু। আর ঈদগাহ মাঠের মিনার পানিতে নিমজ্জিত।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, একটা সময় উপজেলা প্রশাসনের বড় বড় সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলাসহ নানা অনুষ্ঠান প্রায় ৭৮ শতাংশ জমির উপজেলা পরিষদের এই খেলার মাঠেই অনুষ্ঠিত হতো। স্থানীয় ব্যক্তিরাও সকাল–বিকেল বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতেন এখানে। স্থানীয় উদ্যোগে বছরে কয়েকটি ছোট–বড় ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ নানা টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হতো। নানা বয়সী মানুষ ব্যায়াম করার জন্যও এই মাঠেই ভিড় জমাতেন।
কিন্তু উপজেলা পরিষদের এই মাঠের আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ ও পুকুর খননের কারণে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় মাঠে পানি জমে থাকে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মাঠের সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিপ্লব হোসেন নামের এক কলেজছাত্র বলেন, আগে এখানে খেলাধুলা হতো। কিন্তু ৮-১০ বছর ধরে মাঠে পানি জমে আছে। কচুরিপানার ফুল ফুটেছে। এখন আর খেলাধুলা হয় না। খেলার সুযোগ না পেয়ে ছেলেরা মোড়ে মোড়ে বসে মুঠোফোনে গেম খেলে। অনেকেই মাদকাসক্তি ও অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয় যুবক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছরই শুনি বরাদ্দ আইছে, মাঠ ঠিক করা হবি। কিন্তু কই? মাঠ তো যা ছিল, তা–ই রইছে। আসলে সংস্কারের ব্যাপারে সরকারি লোকজন, জনপ্রতিনিধি, নেতা কারও কোনো নজর নেই।’
দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা এস এম মতিয়ার রহমান বলেন, এলাকার সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হতো এই মাঠে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে এখানে আর কোনো নামাজ হয় না। এখানকার মানুষ এখন মসজিদ ও আশপাশের এলাকার ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন। মাঠটি দ্রুত সংস্কার হওয়া দরকার।
কুমারখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফ হোসেন বলেন, এটি একটি সরকারি মাঠ। অথচ দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত। এটা অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখজনক ব্যাপার। দ্রুত মাঠের সংস্কারকাজ হওয়া দরকার।
ইউএনও বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘অর্থসংকটসহ নানা কারণে এত দিনেও মাঠ সংস্কার হয়নি। এবার খুব দ্রুত সংস্কার করা হবে।’