চোর সন্দেহে মারধর ও পুকুরে চুবানোর পর ‘অপমানে’ কিশোরের আত্মহত্যা

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় এক কিশোরকে সেচপাম্প চুরির অপবাদ দিয়ে ময়লা পানিতে চুবানো ও মারধর করা হয়েছে। এই ‘অপমান সহ্য করতে না পেরে’ ওই কিশোর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের কালিয়ান গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

ওই কিশোরের নাম হোসাইন (১২)। সে ওই গ্রামের শামীম মিয়ার ছেলে। তার মা নেই। বাবা ঢাকায় রিকশা চালান। হোসাইন গ্রামে দাদি রোকেয়া বেগমের (৬০) কাছে থাকে। তার লাশ ময়নাতদন্তের পর গতকাল শুক্রবার রাতে বাড়ির পাশের গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে কালিয়ান গ্রামে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তাদের গ্রামের পাশে অবস্থিত কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার তারাপাশা গ্রাম। সম্প্রতি ওই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মো. তোফাজ্জল হোসেনের একটি বৈদ্যুতিক সেচপাম্প চুরি হয়। পাম্পটি পরে স্থানীয় বাজারের একটি দোকান থেকে উদ্ধার করেন তোফাজ্জলের লোকজন।

হোসাইনের দাদি রোকেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পর তাঁর নাতির সমবয়সী সবুজ মিয়া ও ইমন নামে দুই কিশোর হোসাইনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর হোসাইন বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের লোকজন তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে হোসাইনকে গালাগাল করে ডাকতে থাকেন। কিন্তু বসতঘর থেকে হোসাইনের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সেই লোকেরা চলে যান। তিনি বলেন, পরদিন ভোরে তোফাজ্জলের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন তাঁর বাড়িতে এসে হোসাইনকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যান। সেচপাম্পের নলের (পাইপ) খোঁজ পাওয়ার জন্য হোসাইনকে ধরে নিয়ে গ্রামের ময়লা পানির ডোবায় ফেলে চুবান হোসাইনকে। তাঁর (সুফিয়া) ছেলে নাইম ও দেবর আলী হোসেন দ্বিতীয় দফায় হোসাইনকে ধরে নিয়ে মারধর করেন।

রোকেয়া বেগম বলেন, এ ঘটনার পর হোসাইন মনমরা হয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। দীর্ঘসময় নাতির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রোকেয়া বেগম ঘরে ঢুকে দেখতে পান হোসাইন তাঁর বোনের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। পরে তিনি চিৎকার করে লোকজনকে ডাকেন।

তারাপাশা গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত তোফাজ্জল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁদের বসতঘরগুলো তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তোফাজ্জলের ভাই আলী হোসেন বলেন, ‘আমাদের পরিবারের কেউ হোসাইনকে মারধর ও কোনো অপমান করেনি।’

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আজ শনিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর একটি মামলা হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে দেখা হবে।