অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই, ঝুঁকিতে পোশাকপল্লি

পোশাকপল্লিতে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার শোরুম, ৫ হাজার কারখানা। এসবে বিভিন্ন কাজে জড়িত কয়েক লাখ শ্রমিক।

কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লিতে ভবন ঘেঁষে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও তারের জটলা। গত রোববার দুপুরে উপজেলার পূর্ব আগানগর থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

দেশে তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার ঢাকার কেরানীগঞ্জ পোশাকপল্লি। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, আগানগর, নাগরমহল ও ইস্পাহানি এলাকায় এ পল্লির বিস্তৃতি প্রায় দেড় কিলোমিটার।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই পোশাকপল্লিতে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার শোরুম, ৫ হাজার কারখানা। এসবে বিভিন্ন কাজে জড়িত কয়েক লাখ শ্রমিক। সব সময় লেগে থাকে ক্রেতাদের পদচারণ।

পোশাকপল্লির প্রতিটি ভবন একটি আরেকটির গা ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনগুলোতে নেই প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। এ ছাড়া ভবন ঘেঁষে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বৈদ্যুতিক তারের জটলা। অগ্নিঝুঁকির মধ্যে চলছে সেখানকার কার্যক্রম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক বলছেন, ভবনমালিক, কারখানা, দোকানিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এ পোশাকপল্লিতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বঙ্গবাজারের মতো অগ্নিকাণ্ড।

আমার জানামতে, পোশাকপল্লি এলাকায় পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বেশির ভাগ ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রশাসনের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
আবুল বাশার আজাদ, জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. হিরণ বলেন, কেরানীগঞ্জ পোশাকপল্লি এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থায় বিভিন্ন ত্রুটি দেখেছেন তাঁরা। অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা যা রয়েছে, তা অপ্রতুল। এ ছাড়া বহুতল ভবন, মার্কেট ও দোকানগুলোর সামনে বৈদ্যুতিক তারের জটলা রয়েছে। এতে যেকোনো সময় শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও গার্মেন্টস মালিক সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, পোশাকপল্লির আগানগর ছোট মসজিদ এলাকা থেকে পূর্ব আগানগর ও চরকালীগঞ্জ এলাকায় গড়ে ওঠা বহুতল ভবনগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে কোনো ধরনের ফাঁকা না রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ভবনের সিঁড়ি অপ্রশস্ত। পোশাকপল্লির সড়কগুলোও সরু। কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের সুযোগ নেই। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক তার ভবনগুলোর সঙ্গে লাগানো অবস্থায় রয়েছে। পোশাকপল্লির প্রায় ৭০ শতাংশ দোকান ও কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই, নেই জরুরি নির্গমনপথও।

কেরানীগঞ্জ দোকান মালিক ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলিম ঢালী জানান, পোশাকপল্লিতে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। ব্যবসায়ীদের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার জন্য মাইকিং করে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রচারপত্র বিতরণ করে ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পোশাকপল্লি এলাকায় দু-তিন মাস পরপর ফায়ার সার্ভিসের মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা দরকার। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

পূর্ব আগানগরের মসজিদ মার্কেটের সিরাজ গার্মেন্টসের পরিচালক মো. কফিলউদ্দিন বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার কেনার জন্য সমিতি থেকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ গ্যাস সিলিন্ডার কিনব।’

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪-এর জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবুল বাশার আজাদ বলেন, কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লি এলাকায় ৯০ শতাংশ বৈদ্যুতিক তারে কভার দেওয়া। এতে শর্টসার্কিট থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কম। জনসাধারণের সুরক্ষার জন্য যা যা করণীয়, সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, পোশাকপল্লি এলাকায় পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বেশির ভাগ ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রশাসনের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।’

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লি এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সল বিন করিম বলেন, এটি ঝুঁকিপূর্ণ একটি জায়গা। সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া কারও অগ্নিনির্বাপণের প্রশিক্ষণ নেই। জনগণের স্বার্থে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।