এমটিএফই-ফাঁদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ইপিজেডের শ্রমিকেরাও

অল্প পুঁজি ও স্বল্প সময়, নেই কোনো পরিশ্রম। ঘরে বসেই মিলবে লাখ লাখ টাকা। এমন প্রলোভনে পাবনার ঈশ্বরদীতে অনলাইন অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জে (এমটিএফই) অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন শত শত মানুষ। প্রতারণার এই ফাঁদে পড়েছেন উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) অনেক শ্রমিকও।

উপজেলার রূপপুর ও দাশুড়িয়া এলাকায় প্রতারণার শিকার অন্তত ১০ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁরা প্রথমে অনলাইনে অর্থ বিনিয়োগের অ্যাপ এমটিএফইর বিষয়ে জানতে পারেন। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে অ্যাপটি নিয়ে প্রচারণা চালানো হতো। শেখানো হতো অর্থ বিনিয়োগের নিয়ম। প্রথম দিকে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন লাভ দেওয়া হতো ১৩ ডলার। ফলে তাঁরা অর্থ বিনিয়োগে আগ্রহী হতে থাকেন। তাঁদের মতোই উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ টাকা বিনিয়োগ করেন। প্রথমে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে টাকার অঙ্ক বাড়াতে থাকেন। অনেকে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন। এর মধ্যে হঠাৎ করে এমটিএফইর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

রূপপুর মোড়ের এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায়ী আবদুল হালিম জানান, নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এঁদের অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেন। কয়েক মাস লেনদেনের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। অল্প আয়ের শ্রমিকেরাও বেশি বেশি টাকা পাঠাচ্ছিলেন। এই শ্রমিকদের অনেকেই এমটিএফইতে প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। অনেকে কষ্টে জমানো সব টাকা বিনিয়োগ করে শূন্য হয়ে গেছেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইলেকট্রিশিয়ান মনিরুল ইসলাম বিনিয়োগ করেছিলেন ৬০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, প্রকল্পে কর্মরত অনেকে তাঁর মতোই টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন। কষ্টের টাকা হারিয়ে অনেকের সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন

অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ঈশ্বরদী ইপিজেডের শ্রমিকেরা। তাঁদের অনেকেই এটা হারিয়ে এখন পারিবারিক অশান্তিতে ভুগছেন। অনেক নিঃস্ব হয়ে গেছেন। রুলিন বিডি এলটিডি নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহিন রেজা বলেন, তিনি ৯০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। পুরো টাকাই হারিয়েছেন। তাঁর মতো ইপিজেডে কর্মরত অনেকেই টাকা বিনিয়োগ করতেন। অনেকে ১ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগ করেছেন। তবে কতজন বা কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
মায়া খাতুন নামের এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘টাকা খাটায়া টাকার বদলে অশান্তি কিনছি। এহন সুংসারই টেকে না।’

উপজেলার দাশুড়িয়া মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন রাকিবুল ইসলাম। কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন তা না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লাভের আশায় টাকা বিনিয়োগ করে এমন ধরা খাইছি, এখন বলতিও লজ্জা করে। আমরা মতো অনেকেই ধরা খায়ে চুপ হয়া আছে। এখন বলতিউ লজ্জা পাচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এমটিএফইর বিষয়টি তিনিও পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে জেলার কোনো থানাতেই অভিযোগ আসেনি। অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন বলে শুনেছেন। তাঁর ধারণা, মানুষ যেমন নীরবে বিনিয়োগ করেছেন, তেমনি প্রতারিত হয়ে নীরব হয়ে আছেন।