অবহেলায় শেখ রাসেল উদ্যান

তিন দশকের বেশি সময় ধরে উদ্যানের সীমানাপ্রাচীর ও কয়েকটি বেঞ্চ নির্মাণ ছাড়া কোনো কাজই হয়নি।

অবহেলা ও অযত্নে পড়ে আছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের মাঠ। মাঠের একটি অংশ পানিতে ডুবে আছে। সেখানে জমেছে আবর্জনার স্তূপ। সামান্য বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয় মাঠ। ছোট-বড় গর্ত থাকায় মাঠে নেই খেলার পরিবেশ। গতকাল দুপুরেছবি: শিমুল তরফদার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে শেখ রাসেল শিশু উদ্যানটি। শ্রীমঙ্গল শহরের জয়নগর আবাসিক এলাকা ও ভিক্টোরিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন উদ্যানে হয়নি শিশু উপযোগী স্থাপনা। সামান্য বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয় উদ্যানের মাঠ। ছোট-বড় গর্ত থাকায় মাঠে নেই খেলার পরিবেশ।

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, তিন দশকের বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য শেখ রাসেলের নামে নির্মিত উদ্যানের সীমানাপ্রাচীর এবং কয়েকটি বেঞ্চ নির্মাণ ছাড়া কোনো কাজই হয়নি। এখানে শিশু উপযোগী মাঠ ও স্থাপনা নির্মাণ করে তাদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা উচিত।

১৮ অক্টোবর ছিল শেখ রাসেলের জন্মদিন। সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্যানের সীমানাপ্রাচীরের একটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে। কয়েকটি স্থানে সীমানাপ্রাচীর হেলে পড়েছে এবং একাধিক স্থান ধসে পড়েছে। উদ্যানের প্রবেশদ্বারে লোহার রডগুলো ভেঙে আঁকাবাঁকা হয়ে আছে। কিছু জায়গা জঙ্গলে পরিপূর্ণ। বসার জন্য বানানো সিমেন্টের তৈরি কয়েকটি বেঞ্চ ভেঙে গেছে। ঘাস ও লতাপাতায় ছেয়ে গেছে বেশ কিছু স্থান।

বঙ্গবন্ধু শিশু–কিশোর মেলা মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, শ্রীমঙ্গলে শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য আসলে তেমন কিছুই নেই। জায়গাটি অনেক দিন ধরে অবহেলায় পড়ে আছে। যে মাঠ আছে, সেখানে বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ময়লা–আবর্জনা পড়ে থাকে। উদ্যানটি শিশুদের বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা যায়, এখানে শিশুদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী, ফুলবাগান ও শিশুদের খেলাধুলা উপযোগী স্থাপনা করা যায়। এ জন্য তাঁরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা সরকারি ডিসি খতিয়ানের প্রায় ৫ কেয়ার (১৫০ শতক) জায়গাটি ১৯৮৫ সালে শিশু উদ্যানের নামে দেওয়া হয়। ২০১১ সালে উদ্যানের মাঠে বিজয় মেলা চলাকালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে ‘শেখ রাসেল শিশু উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এখানে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে চারদিকে সীমানাপ্রাচীর তৈরির পাশাপাশি কিছু বেঞ্চও তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিবছর বৈশাখী মেলা ও বিজয় মেলা হয় উদ্যানের মাঠে। এ উদ্যানের ৬০ শতক জায়গা শিল্পকলা একাডেমির নামে দেওয়া হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনুশীলন চক্রের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সহসভাপতি কাওসার ইকবাল বলেন, ‘আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা উদ্যোগ নিয়ে এখানে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরি করেছি। সেই মঞ্চও জরাজীর্ণ। চারদিকে ময়লা–আবর্জনায় ঠাসা। প্রতিবছর এখানে অনুশীলন চক্রের আয়োজনে বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে। বৈশাখী মেলার সময় মাঠে মাটি ফেলে ময়লা পরিষ্কার করি।’

উদ্যানের সীমানাপ্রাচীর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন কাওসার ইকবাল। তিনি বলেন, সরকারিভাবে দৃষ্টি দিলে এখানে শিশুদের উপযোগী অনেক কিছু করা যায়। এখানে একটি পরিপূর্ণ শিশু উদ্যান গড়ে উঠলে স্থানীয় শিশুদের কলকাকলিতে মুখর হবে উদ্যান প্রাঙ্গণ।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ বলেন, এই শিশু উদ্যান নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনা আছে। শিশু উপযোগী উদ্যান করতে কাজ শুরু করা হবে।