কস্টিক সোডা, সয়াবিন ও চিনিতে তৈরি হতো ভেজাল দুধ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ভেজাল দুধ তৈরি কারখানায় অভিযানের সময় জব্দকৃত সরঞ্জাম
ছবি: সংগৃহীত

গরুর খাঁটি দুধ থেকে প্রথমে ক্রিম তুলে নেওয়া হয়। এরপর সাদা পানিতে মেশানো হয় কস্টিক সোডা, সয়াবিন তেল ও চিনি। তৈরি হয়ে যায় ঘন ভেজাল দুধ। পরে এই দুধ বাজারজাত করা হয়। আজ বুধবার সকালে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এমনই নকল দুধ তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছে।

অভিযানের সময় নকল দুধ তৈরি চক্রের দুই সদস্য পালিয়ে গেছেন। পরে অপর একজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ও নকল দুধ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মাসুদ রানা। বাড়ি উপজেলা সদরের ভবানীপুর গ্রামে। নিজ বাড়িতেই তিনি কারখানাটি গড়ে তুলেছিলেন। তাঁকে ভেজাল দুধ তৈরির কাজে সহযোগিতা করতেন গ্রামের সিদ্দিক ও শামীন নামের অপর দুই সহযোগী। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান।

ইউএনও জানান, পবিত্র রমজান মাসে দুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভেজাল দুধ তৈরি হচ্ছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গ্রামের মাসুদ রানার বাড়িতে ভেজাল দুধ তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। কারখানাটিতে খাঁটি দুধ থেকে মেশিনের মাধ্যমে প্রথমে ক্রিম তুলে নেওয়া হতো। এরপর পাতলা দুধে কস্টিক সোডা, সয়াবিন তেল , চিনি ও পানি মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হতো। অভিযানে কারখানা থেকে দেড় বস্তা কস্টিক সোডা, ১৮ বস্তা চিনি ও বেশ কিছু সোয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া গেছে।

ইউএনও নাহিদ হাসান খান বলেন, অভিযানের সময় মাসুদ রানার দুই সহযোগী পালিয়ে গেছেন। তবে মাসুদ রানা আদালতের কাছে ভেজাল দুধ তৈরির কথা স্বীকার করেছেন। আদালত তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে এবং কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁরা আবার এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে আরও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন ইউএনও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলাটি দুগ্ধ খামারসমৃদ্ধ। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুধ সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ওই এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করে। এ সুযোগে বেশ কয়েকটি চক্র ভেজাল দুধের রমরমা ব্যবসা শুরু করছে। প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় ভেজাল দুধের কারখানাগুলো বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। তারা যেসব উপকরণ দিয়ে দুধ তৈরি করছেন তা খুবই ক্ষতিকর।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, ভেজাল দুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কস্টিক সোডা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দুধের মূল উপাদান সরিয়ে এ ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ দিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করায় মানুষ প্রতারিত ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। অন্যদিকে ভেজাল দুধের কারবারিদের কারণে প্রকৃত খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘ভেজাল বন্ধে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। বিভিন্নভাবে  সচেতন ও সতর্ক করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি আরও খোঁজখবর নেব। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।’