বেড়িবাঁধঘেঁষা জমি দখল 

সরকারি জমিতে নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ করার নোটিশ দিয়েছে পাউবো। বাঁধের দখলদার হিসেবে ২০০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বেড়িবাঁধ ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ ভবন। সম্প্রতি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর মোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইস বাজার এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। বাঁধের দুই ঢালে টিনশেড ঘর তুলে ও পাকা ভবন নির্মাণ করে জমি দখলে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা।

বেড়িবাঁধ ঘেঁষে স্থাপনা নির্মিত হওয়ায় বাঁধের স্থায়িত্ব ও বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ইতিমধ্যে সরকারি জমিতে নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ করার নোটিশ দিয়েছে পাউবো। বাঁধের দখলদার হিসেবে ২০০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরও দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত শেষে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে।

পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদ খান রাজ ও তাঁর ভাই শহিদুল খান বাঁধের ঢালে ভবন নির্মাণ করছেন। পাউবোর মালিকানাধীন ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও অপসারণের জন্য ৩ নভেম্বর ছাত্রলীগ নেতাসহ দুই ভাইকে নোটিশ দিয়েছে। ওয়াহিদ খান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপগণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক।

পাউবো সূত্র জানায়, সাগর মোহনাঘেঁষা দ্বীপ ইউনিয়ন চর মোন্তাজ। ইউনিয়নের পূর্ব ও উত্তর দিকে তেঁতুলিয়া নদী, পশ্চিমে বড়াগৌরাঙ্গ নদ ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-জলোচ্ছ্বাস থেকে জানমাল রক্ষায় ১৯৯১ সালে পাউবো এ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধের দৈর্ঘ্য ৩২ দশমিক ৭ কিলোমিটার। বাঁধের চর মোন্তাজ স্লুইস বাজার এলাকায় অন্তত ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে অবৈধ দখল চলছে। বাঁধের দুই ঢালে বেশ কিছু দখলদার অবৈধভাবে দখলে নিয়েছেন। আবার কেউ সরকারি জমি দখলে কিনে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। কেউ করেছেন টিনশেড ভবন, তবে অধিকাংশ দখলদার পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন। ইতিমধ্যে দখলদার হিসেবে ২০০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই দখলদারেরা ৬ দশমিক ২ একর সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছেন।

সরকারি জমি দখলে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল মাতুব্বর বলেন, ‘আমি রাজ ও শহিদুল খানের কাছে দুই শতক জায়গা বিক্রি করেছি। প্রথমে দুই লাখ টাকা নিয়েছি এবং পরে দেড় লাখ টাকা নিয়েছি।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইস বাজার থেকে প্রায় ৫০০ গজ উত্তরে বেড়িবাঁধ ঘেঁষে একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ভবনটির ছাদ ঢালাই ও ইটের গাঁথুনির কাজ শেষ পর্যায়ে। পলেস্তারা ও পেছন দিকে বর্ধিত করার কাজ চলছে।

এ বিষয়ে শহিদুল খান বলেন, ‘এই জমি স্থানীয় জুয়েল মাতুব্বর নামের এক লোকের দখলে ছিল। তিনি তাঁর কাছ থেকে এ জমি কিনেছেন।’ দখলি জমি কীভাবে কিনলেন, জানতে চাইলে শহিদুল খান বলেন, টাকা নিয়ে স্ট্যাম্প দিয়েছেন। এ ছাড়া এ বাজারে বাঁধের দুই ঢালে যত ভবন আছে, সবই দখলি জমিতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দখলদার বলেন, স্লুইস বাজার এলাকায় বাঁধের দুই পাশের ঢালের অধিকাংশ স্থাপনা অবৈধ দখলে নেওয়া পাউবোর জমি। এখানে সরকারি জমি দখলি হিসেবে বিক্রিও হচ্ছে। তিনিও দখলি জমি কিনে টিনশেড ঘর করেছেন।

পাউবো কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, বাঁধের ঢাল ব্যবহার করে কোনো স্থাপনা করা উচিত নয়। এতে বাঁধের মাটিকাটা পড়ে। বাঁধের স্থায়িত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে। বাঁধের দুই ঢালের সরকারি জমি দখলদার হিসেবে ২০০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাউবোর ভূমিতে অবৈধভাবে দখলে নিয়ে পাকা ভবন নির্মাণ করায় নোটিশ দিয়ে বন্ধ ও অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দখলদারদের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।