ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না

গত পাঁচ মাসে জেলায় ২৩৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসে ৬৮টি।

জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র

জয়পুরহাটে গভীর ও অগভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না। গত পাঁচ মাসে জেলায় ২৩৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ২৫ দিনে ৬৮টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

ট্রান্সফরমার চুরি রোধে সেচ পাম্প ও শিল্প সংযোগের মালিকদের নিজ দায়িত্বে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা নিতে জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। তবে এই উদ্যোগও কাজে আসেনি। পুলিশ বলছে, আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কারণে মাঠ ফাঁকা থাকছে। এ কারণে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। চুরি ঠেকাতে পুলিশ কাজ করছে।

ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ট্রান্সফরমার চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারও করছে। তবু ট্রান্সফরমার চুরি থামছে না। এ জন্য ট্রান্সফরমার চুরি রোধে গভীর-অগভীর মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।
ইউসুফ আলী, জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম)

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫ হাজার ২০০টি গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্য ২ হাজার গভীর নলকূপ ও ৩ হাজার ২০০টি অগভীর নলকূপ। এসব গভীর-অগভীর নলকূপে ৫-২৫ কেভি ক্ষমতার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার রয়েছে। প্রতিবছরই ফসলি মাঠের গভীর-অগভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৬০টি, আগস্টে ৪৭টি, সেপ্টেম্বরে ১৬টি, অক্টোবরে ৪৯টি ও চলতি নভেম্বরের ২১ দিনে ৬৫টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জানান, সেচ ও সংযোগে ৫ কেভি, ১০ কেভি, ১৫ কেভি ও ২৫ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার লাগানো হয়। ৫ কেভির ট্রান্সফরমারের দাম ৪২ হাজার ৬০০ টাকা, ১০ কেভির ট্রান্সফরমার ৬৭ হাজার, ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার ৭৯ হাজার টাকা ও ২৫ কেভি ট্রান্সফরমারের দাম ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।

প্রথম দফায় চুরি হলে গ্রাহক সমিতিতে ট্রান্সফরমারের অর্ধেক দাম দিতে হয়। দ্বিতীয় দফায় চুরি হলে নির্ধারিত দাম সমিতিতে দিয়ে দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। চুরি যাওয়া প্রতিটি ট্রান্সফরমারে ১২-১৫ কেজি তামার তার থাকে। চোরেরা প্রতি কেজি তামার তার ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করে। চুরি যাওয়া ২৩৭টি ট্রান্সফরমারের গড়মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন গভীর ও অগভীর নলকূপের মালিক বলেন, দুই বছর আগে তাঁদের গভীর-অগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছিল। পরের বছর আবারও ট্রান্সফরমার চুরি হয়। দুবার তাঁদের প্রায় এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন নিজেরা ট্রান্সফরমার পাহারা দেন।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ট্রান্সফরমার চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারও করছে। তবু ট্রান্সফরমার চুরি থামছে না। এ জন্য ট্রান্সফরমার চুরি রোধে গভীর-অগভীর মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নুরে আলম বলেন, পুলিশ বিভিন্ন সময় ট্রান্সফরমার চোরদের গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে ট্রান্সফরমারের তামার তারও জব্দ করেছে। এখন মাঠের আমন ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে। অনেক মাঠ ফাঁকা থাকায় চোরেরা এ সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে। এই চোর চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।