চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এর ফলে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কোনো বাস আজ বুধবার ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই এ অচলাবস্থা চলছে।
আজ সকাল ১০টায় সরেজমিন ক্যাম্পাসে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট–সংলগ্ন মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটক ও দুই নম্বর গেটে তালা ঝুলছে। ফলে কোনো পরিবহন ক্যাম্পাস থেকে বের হতে পারছে না। কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারীর উপস্থিতিও দেখা যায়নি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ তাঁরা কেউ কার্যালয়ে যেতে পারেননি। কোনো পরিবহনও চলাচল করছে না। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে।
শিক্ষার্থীদের এই ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে থাকা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সৈয়ব আহমেদ সিয়াম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আক্তারকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু এখনো প্রজ্ঞাপন হয়নি। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতাদর্শের কাউকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার জন্য তদবির করছে। এ কারণে উপাচার্য নিয়োগে দেরি হচ্ছে।’
সৈয়ব আহমেদ বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় আবাসিক হলগুলোতে বরাদ্দ হচ্ছে না। এ কারণে সশরীরে ক্লাসও করা যাচ্ছে না। এ কারণে তাঁরা শাটডাউন করেছেন। এই অবস্থা দেখার পরে দায়িত্বশীলরা দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে তাঁদের আশা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে গত ১ জুলাই থেকে। ওই দিন থেকেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ফলে আটকে যায় বিভিন্ন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষাও। পরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আবার নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯ আগস্ট থেকে শ্রেণির কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিন্ডিকেট। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। দাবির মুখে পদত্যাগ করেন উপাচার্য, দুই সহ–উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক, প্রক্টরিয়াল বডির ১০ সদস্য ও ১৪টি হলের প্রাধ্যক্ষ। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে প্রশাসনিক কাজ সীমিত আকারে এত দিন চলছিল। দৈনন্দিন ও জরুরি দাপ্তরিক কাজকর্ম চলছে ডিনস কমিটির মাধ্যমে।