সামান্য বৃষ্টি হলেই লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় ও কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে যায়। গতকালের ছবি
প্রথম আলো

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় ও কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির মাঠ একটাই। সামান্য বৃষ্টিতে সেই মাঠে পানি জমে যায়। সাত বছর ধরে এ সমস্যা চলছে। নানা দপ্তরে আবেদন জানিয়েও জলাবদ্ধতার সমাধান মেলেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে বাঁ দিকে মাঠে গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি জমেছে। সে পানি মাড়িয়ে কয়েকজন চলাচল করছে। মাঠের একপাশে পানি না থাকলেও সেখানে কাদা জমে আছে। এক শিক্ষার্থী দৌড়াতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় ও কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী আছে। দেড় একর আয়তনের মাঠটির জমি নিচু হওয়ায় এবং পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় মাঠটিতে বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। সাত বছর ধরে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মাঠে পানি থাকে। কাদাপানির জন্য শিক্ষার্থীরা অ্যাসেম্বলি ও শরীরচর্চা করতে পারে না। এতে স্কুলের সহশিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নওশীন জাহান বলে, বিদ্যালয়ের মাঠে বৃষ্টির পানি জমে বের হতে পারে না। আসা যাওয়ার সময় কেউ না কেউ পা পিছলে পড়ে যায়। তখন পোশাক, বইখাতা সবকিছু ভিজে যায়। আর মাঠে পানির জন্য খেলাধুলা বন্ধ থাকে পুরো বর্ষাকাল। তারা চায়, জলাবদ্ধতার দ্রুত সমাধান হোক। তারা মাঠে খেলতে চায়, দৌড়ঝাঁপ করতে চায়। 

মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সাত বছর আগে বিদ্যালয়ের মাঠের পানি বের হওয়ার জন্য পূর্ব দিকে পথ ছিল, এখন সেদিকের নিচু জমি মাটি ভরাট করে উঁচু করায় এবং নিকটবর্তী একটি কালভার্ট অকার্যকর হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।’

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, অভিন্ন মাঠের জলাবদ্ধতা নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দুটি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে তাঁর বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ পাল বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৩৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি গত ছয় বছরে বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নয়, আশপাশের কয়েক গ্রামের শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মাঠ। মাঠটি সাত বছর ধরে সংস্কার করা হয় না। পানি নিষ্কাশনের নালা বন্ধ করে বাড়িঘর নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবভিত্তিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাহির তাহু বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে উভয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। আলাপ–আলোচনা করে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

ইউএনও জহির ইমাম বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পাশাপাশি অবস্থিত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে মাঠ থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।