গাজীপুরে প্রাইভেট কারে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর এক বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি, খোলেনি জট
নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা প্রতিবেদনে মৃত্যুর কোনো কারণ পাওয়া যায়নি।
ওই ঘটনায় জিয়াউর রহমানের ভাই আতিকুর রহমান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
গাজীপুর মহানগর এলাকায় প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের এক বছর হয়ে গেলেও এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। ফলে ওই দম্পতির মৃত্যুরহস্যও খোলাসা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্বজনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। তবে পুলিশ বলছে, তারা হাল ছাড়ছে না। তদন্তকাজ চলছে।
নিহত দম্পতি হলেন এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫১) ও মাহমুদা আক্তার ওরফে জলি (৩৫)। জিয়াউর রহমান গাজীপুরের টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাহমুদা ছিলেন টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
গত বছরের ১৮ আগস্ট মহানগরের বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেট কার থেকে তাঁদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা হত্যা মামলার পর পুলিশ নানাভাবে তদন্ত শুরু করে। নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা প্রতিবেদনে মৃত্যুর কোনো কারণ পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তদন্তের অংশ হিসেবে প্রাইভেট কারটি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ জন্য গাড়িটি প্রথমে দেওয়া হয়েছিল বুয়েটে। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয় তারা কাজটি করতে পারবে না। পরে গাড়িটি গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) দেওয়া হয়। গাড়িটির রাসায়নিক পরীক্ষা করে (কেমিক্যাল টেস্ট) করে প্রতিবেদন দেবে তারা। সেই প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে পুলিশ।
এ বিষয়ে গাজীপুরের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো হাল ছাড়িনি। মামলার তদন্তকাজ চলমান রয়েছে। ময়নাতদন্ত বা ভিসেরা প্রতিবেদনে যেহেতু কিছু পাওয়া যায়নি, তাই এখন নিহতের ব্যক্তিগত গাড়িটির রাসায়নিক পরীক্ষার অপেক্ষায় আছি। সেটি করা হলেই পুলিশ তাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে।’
নিজ বাড়ি থেকে প্রতিদিন প্রাইভেট কার নিয়ে বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বের হতেন ওই শিক্ষক দম্পতি। গাড়িটি জিয়াউর রহমান নিজেই চালাতেন। সন্ধ্যায় ফিরতেন তাঁরা। প্রতিদিনের মতো একই প্রাইভেট কারে করে গত বছরের ১৭ আগস্ট সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হন জিয়াউর-মাহমুদা। এর পর থেকে তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন সকালে গাছা থানাধীন দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেট কারে তাঁদের নিথর দেহ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ নিহত শিক্ষকদের লাশ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় জিয়াউর রহমানের ভাই আতিকুর রহমান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কার্যক্রমে ধীরগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত শিক্ষক দম্পতির স্বজনেরা। মামলার বাদী ও জিয়াউর রহমানের ভাই আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের জানিয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বা ভিসেরা প্রতিবেদনে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা যেহেতু এগুলি বুঝি না, তাই তাদের ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। কিছুদিন আগেও পুলিশ তদন্ত করতে আমাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিএনজি স্টেশনে নিয়ে যায়, যেখান থেকে তাদের গাড়িতে গ্যাস ভরা হতো। সেখানে বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। এখন পুলিশ গাড়িটির রাসায়নিক পরীক্ষা করতে চাইছে।’
গাড়িটি ফেরত পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন আতিকুর। কিন্তু তদন্তের জন্য গাড়িটি আরও কিছুদিন দরকার বলে জানিয়েছে পুলিশ। আতিকুর রহমান তাঁর মায়ের বরাত দিয়ে বলেন, ‘মা আজকেও কয়েকবার বলেছে, “ছেলেটা (জিয়াউর রহমান) স্কুলে যাওয়ার সময় আমাকে কিছুই বলে গেল না। কেন ও দেখা না করেই স্কুলে সেদিন চলে গিয়েছিল।” মায় প্রায়ই আমাকে ডেকে এসব কথা বলেন। তাঁর (জিয়াউর রহমান) ছেলেটাকে নিয়েও চিন্তায় আছি। সে–ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তার জন্য আমরা ভালো একটা কিছু করতে চাই।’