তিনটি ট্রেন বন্ধ আড়াই বছর

স্বল্প টাকায় ঢাকায় যাতায়াতে হাওর অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের ভরসা ছিল এই ট্রেনগুলো। ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা।

করোনার শুরু থেকে কিশোরগঞ্জের তিনটি ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। যে দুটি ট্রেন চালু আছে, সেগুলোতে প্রতিদিন উপচে পড়া ভিড়। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে
ছবি: প্রথম আলো

করোনাকালে বন্ধ হওয়া তিনটি ট্রেন এখনো চালু না হওয়ায় কিশোরগঞ্জবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস (মেইন ট্রেন), লোকাল ২৪২ ডাউন ও লোকাল ২৪৪ ডাউন নামের এই ট্রেন তিনটি ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহে আসা-যাওয়া করত। স্বল্প টাকায় ঢাকায় যাতায়াতে হাওর অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের ভরসা ছিল এই ট্রেনগুলো। আড়াই বছর ধরে এ ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর সময়কালে হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস ও লোকাল ওই দুটি ট্রেন সার্ভিস। এরপর থেকেই কিশোরগঞ্জবাসীর মধ্যে হতাশা নেমে আসে। তাঁরা তখনই এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দ্রুত ট্রেনগুলো চালুর দাবি জানিয়েছিলেন।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জে থেকে ঢাকা পথে প্রতিদিন দুটি আন্তনগর ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে আন্তনগর এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি দিনে দুবার (প্রভাতী ও গোধূলী) চলাচল করে। আর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে আরেকটি আন্তনগর ট্রেন দিনে একবার যাওয়া-আসা করে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়া–আসা করে। এই ট্রেনগুলোতে প্রতিদিনই আসনের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি যাত্রী যাতায়াত করছেন। ট্রেনের ভেতরে যাত্রীদের গিজগিজ অবস্থায় ট্রেনের বগি বাড়ানোর জোর দাবি উঠছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

নিয়মিত ট্রেনে ভ্রমণকারী মফিজ উদ্দিন নামের এক যাত্রী বলেন, দিন দিন যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো এবং ট্রেনের যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে, তখন তিনটি ট্রেন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই না।

কিশোরগঞ্জ শহরতলির বাসিন্দা আশিক আকরাম বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে অফিস শেষে অনেকেই এসব ট্রেন দিয়ে মানিকখালি, সরারচর ও ভৈরবে সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। কিশোরগঞ্জের বীর ঈশা খাঁর স্মৃতিবিজড়িত ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনটি ঢাকা যাওয়ার ক্ষেত্রে শুরুর দিকের একটি ট্রেন সার্ভিস। ট্রেনটিকে ঘিরে কিশোরগঞ্জবাসীর অনেক স্মৃতিও জড়িয়ে আছে। বন্ধ হওয়া তিনটি ট্রেনের যাত্রীরা যাতায়াতের পাশাপাশি অল্প টাকায় মালামাল পরিবহনের সুবিধাও পেতেন। এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য ট্রেনগুলো বন্ধ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও চালু হবে ট্রেনগুলো। কিন্তু ট্রেনগুলো আবাও চালু না করায় মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।

কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের সমন্বয়ক এনায়েত করিম বলেন, তাঁরা পাঁচ-সাত বছর ধরে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় নতুন আন্তনগর ট্রেন, ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ ডাবল রেললাইন করা, কালিকা প্রসাদ থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত রেললাইনের সংস্কার এবং কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় যে দুটি আন্তনগর ট্রেন বর্তমানে চলমান, সেগুলোকে সি গ্রেড থেকে এ গ্রেডে উন্নীত করা, বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের আসনসংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। কারণ, এই রুটে যাত্রীসংখ্যা অনেক বেশি। অপর দিকে, রেললাইন সংস্কার না হওয়ায় প্রায়ই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এ নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন মহলে লিখিত আবেদনসহ মানববন্ধনের মতো বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। কিন্তু দাবি পূরণ না করে রেল কর্তৃপক্ষ উল্টো কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য ও স্মৃতিবিজড়িত ঈশা খাঁ মেইল ট্রেনটিসহ তিনটি ট্রেন বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের ভাড়া বাড়ায় এসব গন্তব্যের গরিব যাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।

কিশোরগঞ্জ রেলের স্টেশনমাস্টার মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া এ তিনটি ট্রেনে প্রায় ৬০০ আসন ছিল। করোনার সময় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলো আবারও চালু করতে পারলে গরিব যাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীদের জন্য খুবই সুবিধা হতো বলে তিনিও মনে করেন। ঈশা খাঁ ট্রেনটি চালুর জন্য তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাজে লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানান।