বান্দরবানে পর্যটন খাতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে

বান্দরবানে গতকাল শুক্রবার চিম্বুক পাহাড়ের কাপ্রুপাড়া এলাকায় পর্যটকের ভিড়
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানে ঝিমিয়ে পড়া পর্যটন খাতে গত কয়েক দিনে কিছুটা প্রাণ ফিরেছে। চলতি মাসের শুরু থেকে পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। তবে দিনে এসে দিনে ফিরে যাওয়া অনাবাসিক পর্যটকের সংখ্যা বেশি। ফলে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের স্বস্তি এলেও হোটেল-মোটেলের ব্যবসা ভালো চলছে না।

জেলার পর্যটনে আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলোয় গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার ঘুরে পর্যটকের আনাগোনা দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে শৈলপ্রপাত, ওয়াইজংশনে গাড়ি ভিড় দেখা যায়। সেখান থেকে আরও দূরে চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরিতে নেমে আসা শরৎ মেঘের ভেলায় ঘুরে কোথাও রোদ আবার কোথাও বৃষ্টি উপভোগ করেছেন পর্যটকেরা। আজও জেলা শহরের আশপাশে নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণমন্দিরে আগের চেয়ে অনেকটা ভিড় লক্ষ করা গেছে।

নীলগিরি এলাকায় কাপ্রুপাড়ায় রোজিনা ইসলাম নামে ঢাকা থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, তাঁরা ৪০ জনের একটি দল কক্সবাজারে সমুদ্রভ্রমণ শেষে বান্দরবানে পাহাড়ে মেঘ-রোদ-বৃষ্টির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে এসেছেন। এখানে বৃষ্টি হয়েছে, আকাশের মেঘ নেমেছে, তারপর আবার রোদ উঠেছে। মাথার ওপর যেমন বৃষ্টি ঝরেছে, তেমনই দূরে বৃষ্টি হওয়ার অপূর্ব দৃশ্যও উপভোগ করেছেন।

হাসান নামের আরেকজন বলেন, তিনি আগেও কয়েকবার বান্দরবানে ঘুরেছেন। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের প্রকৃতির রূপেরও পরিবর্তন হয়। সে জন্য বিভিন্ন মৌসুমে পাহাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

চাঁদের গাড়িচালক (জিপ) মো. ইমরান জানান, ১ অক্টোবর থেকে মানুষজন আসছেন। তাঁদের ভালো রোজগার হচ্ছে। পর্যটক পরিবহনের লাইনম্যান ফখরুল ইসলাম বলেছেন, একেবারে নিষ্প্রাণ অবস্থা থেকে মোটামুটি প্রাণ ফিরেছে। গতকাল প্রায় ৬০টি গাড়িতে পর্যটক এসেছেন। আজ বিকেল পর্যন্ত হয়তো ৭০ থেকে ৭৫টি গাড়ি যাবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভালো।

বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ের কাপ্রুপাড়া এলাকায় পর্যটকবাহী গাড়ির ভিড়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

তবে গাড়িতে পর্যটক যাতায়াত বাড়লেও হোটেল-মোটেলে উপস্থিতি কম, জানালেন মালিক-কর্মকর্তারা। হলিডে ইনের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন জানান, বেশির ভাগ পর্যটক সকালে এসে সারা দিন ঘুরে বিকেলে ফিরে যাচ্ছেন। এ জন্য ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েও প্রত্যাশা অনুযায়ী অতিথি পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য দুর্গাপূজার ছুটিতে আগাম ভাড়া বা বুকিং পাওয়া যাচ্ছে।

জেলা হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বান্দরবানের আতিথ্য গ্রহণের জন্য পর্যটকদের পরিবহনে ২০ শতাংশ ও হোটেল-মোটেলের আবাসনে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। পর্যটন দিবসে ছাড়ের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে পর্যটকের আগমন কিছুটা বেড়েছে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত এই ছাড়ের ঘোষণা বহাল থাকবে। আগামী কয়েক দিনে পর্যটকের আগমন আরও বাড়তে পারে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, দেশের অন্য জেলার তুলনায় বান্দরবানের পরিস্থিতি ভালো। তাই ভ্রমণকারীরা গন্তব্য হিসেবে এখন বান্দরবানকে বেছে নিচ্ছেন। পর্যটকদের জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় সজাগ রয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে। পর্যটন-সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।