বস্তার গায়ে চালের দাম ও জাত উল্লেখ, ছয় মাস সময় চাইলেন কুষ্টিয়ার মিলাররা

কুষ্টিয়ার চালকল মালিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষেছবি: প্রথম আলো

মিলাররা যখন গুদাম থেকে চাল বের করবেন, তার আগে বস্তার গায়ে উৎপাদনকারী মিল, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেটের দাম ও ধান-চালের জাত উল্লেখ করতে হবে। পয়লা বৈশাখ থেকে এ নির্দেশনা মানার কথা ছিল মিলারদের। কিন্তু কুষ্টিয়ায় চাল উৎপাদনকারী মিলমালিকেরা ওই নির্দেশ এখনো মানা শুরু করেননি। তাঁরা নির্দেশনা মানতে আরও ছয় মাস সময় চেয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলাররা এ দাবি জানান। জেলা প্রশাসক তাঁদের দাবির বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদন আকারে পাঠাবেন বলে সভায় আশ্বাস দেন।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালকলের মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা। এ সময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামের শীর্ষ চালকলের মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন। চালকল (অটোমেটিক ও হাস্কিং) থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সরবরাহ করা চালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং মূল্য ও সরবরাহ অবহিতকরণ–সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রবিষয়ক এ সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া সভা শেষ হয় সন্ধ্যা ছয়টায়।

সভায় বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি সংগঠনটির কুষ্টিয়া শাখারও সভাপতি। এ ছাড়া খাজানগর মোকামের দেশ অ্যাগ্রোর মালিক আবদুল খালেক, ফ্রেশ অ্যাগ্রোর মালিক ওমর ফারুক, বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাফর ও জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অন্তত ১০ জন চালকলের মালিকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, সভায় অন্তত ১০০ মিলমালিক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে ১০ থেকে ১২ জন বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন। সবার সম্মতিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মানতে একমত হন তাঁরা। তবে এটা মানতে আরও ছয় মাস সময় চেয়েছেন। তাঁরা এ জন্য বেশ কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বস্তার গায়ে মিল, জাতের নাম ও দাম লেখার আধুনিক যন্ত্র এখনো তাঁদের কাছে আসেনি। এটা দীর্ঘ সময়ের বিষয়। এ ছাড়া চালের দাম ওঠানামা করে। সে ক্ষেত্রে একটি আলোচনার বিষয় আছে। এগুলো বাস্তবায়নে লোকবল প্রয়োজন। সব মিলিয়ে ছয় মাসের সময় দাবি করা হয়েছে।

কয়েকজন মিলমালিক জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি করেন, বস্তায় চালের দাম নির্ধারণ করার আগে ধানের দামও নির্ধারণ করা দরকার। খাদ্যমন্ত্রীর এলাকায় এটার (ধান-চালের দাম লেখা) বাস্তবায়ন আগে করতে হবে। এ ছাড়া কাগজে লিখে স্টিকার হিসেবে বস্তার সঙ্গে সেলাই করা গেলে খুব কম সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সভায় অনেক কথা হয়েছে। বেশ কিছু দাবির কথা জানানো হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মানতে অনেক কিছু জড়িত। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে। সেটি পরিষ্কারভাবে যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, চালকলের মালিকদের দাবিগুলো শোনা হয়েছে। তাঁদের কিছু যৌক্তিক দাবি আছে, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে উচ্চপর্যায়ে জানানো হবে।