জাকসু নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল চার প্যানেল, আবার ভোট দাবি

সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের কথা জানান চারটি প্যানেলের প্রার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরেছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনে (জাকসু) নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের পরে ভোট বর্জন ও পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে চারটি প্যানেল।

প্যানেলগুলো হলো সম্প্রীতির ঐক্য, সংশপ্তক পর্ষদ, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোট বর্জন করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের কথা জানান এসব প্যানেলের প্রার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গতকাল রাতে ব্যালট বাক্স নিয়ে হট্টগোল থেকে শুরু করে রাত দুইটাই পোলিং এজেন্টের ঘোষণা দেওয়া, তার ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ম্যানেজ করতে না পারা, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেওয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা, ভোটারের তুলনায় ব্যালট বেশি ছাপানো, লাইন জ্যামিং, বহিরাগতদের আনাগোনা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই দায় কেবল এবং কেবলমাত্র এই ব্যর্থ, অথর্ব এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসনের।’

শরণ এহসান বলেন, ‘এই নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াতেই নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচন আমাদের আজীবনের দাবি। আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করেছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নতুন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’

শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা, অব্যবস্থাপনা ও অথর্বতা এই সমগ্র নির্বাচনের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে উল্লেখ করেন শরণ এহসান।

ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হলেও কিছু প্রার্থী ডোপ টেস্টে অংশগ্রহণ করেনি দাবি করেন শরণ এহসান। তিনি বলেন, ‘এমনকি আজকে নির্বাচন থাকলেও এখন পর্যন্ত ডোপ টেস্টের ফলাফল পাওয়া যায়নি।’

লিখিত বক্তব্যে ভোট বর্জনের ব্যাপারে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো—

এক. প্রথম দুই ঘণ্টায় কোনো পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য যে গতকাল রাত দুটায় নির্বাচনের ঠিক পাঁচ ঘণ্টা আগে প্রবেশের ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়। তবু আজ সকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে, প্রার্থীদের স্বাক্ষর, পোলিং এজেন্টদের ছবি ইত্যাদি নতুন নতুন বাহানা এনে তাঁদের অন্তত দুই ঘণ্টা পর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। পোলিং এজেন্টের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে প্রভোস্টরা উত্তর দেন, তাঁদের উপরে আস্থা রাখতে।

দুই. বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট নিশ্চিতকারী আঙুলের কালি সকাল থেকে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ তুললে কালি নিয়ে আসা হলেও দেখা যায় সে কালি কিছুক্ষণের মাঝে হাত থেকে উঠে যায়।

তিন. নির্বাচন বিধিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে (বিশেষত ছাত্রী হলে) দেখা গেছে একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের (ছাত্রশিবির) লিফলেট হাতে হাতে সরবরাহ করছিল, এমনকি জাহানার ইমাম হলে বুথের মাঝে দুটি প্যানেলের লিফলেট সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। এটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত করে। এমনকি জাহানারা ইমাম হলে মেয়েদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়।

চার. ১০ শতাংশের বেশি ব্যালট পেপার ছাপিয়ে এই প্রশাসন প্রহসন করেছে, এমনকি আজ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয় ও বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পাঁচ. একই সঙ্গে নজরুল হলে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সব প্রার্থীর নাম না থাকায় সেখানে প্রথমে বাকি প্রার্থীদের নাম ছাড়াই নির্বাচন চলতে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে হাতে লিখে প্রার্থীদের নাম ব্যালট পেপারে যোগ করা হয়।

ছয়. নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা, ভোটারের তুলনায় ব্যালট বেশি ছাপানো, লাইন জ্যামিং, বহিরাগতদের আনাগোনা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্নে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

শরণ এহসান বলেন, ‘জাকসুতে অসংগতির দায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা, গাফিলতি, ব্যর্থতার কারণে এই ইলেকশনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে যে কারও মনে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কয়েক দিন ধরেই ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বাগছাস, স্বতন্ত্র, সম্প্রীতির ঐক্য—সকল প্যানেলই নিজেদের জায়গা থেকে নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা এবং পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ করেছে। বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও নির্বাচন কমিশনের আচরণের কোনো পরিবর্তন হয় নাই।’