শঙ্কার মধ্যেও টিকে আছে ব্যবসা

ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ চামড়ার বাজারে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আগামী শনিবার বসবে বিশেষ হাট। গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মো. শাহাজাহান ৩৭ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করেন। এর মধ্যে গত ১২ বছর ব্যবসায় মন্দা। তবু ব্যবসা ছাড়তে পারছেন না। সামনে সুদিন আসবে এমন আশায় এখনো টিকে আছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ এলাকার চামড়ার বাজারে গিয়ে কথা হয় মো. শাহাজাহানসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাঁরা প্রত্যেকে এবার ঈদে লোকসান হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা ঝড়ঝাপটা সয়ে এখনো ব্যবসা করছেন। তবে গত ১০ বছরে অনেক ব্যবসায়ী এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

শম্ভুগঞ্জ চামড়ার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাতো গোনা কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের কেনা চামড়া লবণ ছিটিয়ে পরিচর্যা করছেন। বাজারজুড়ে ছোট ছোট চামড়ার স্তূপ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শম্ভুগঞ্জ পশুর চামড়ার বাজারটি অনেক পুরোনো। আগে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাট জমত। এখন শুধু শনিবারে হাট বসে। প্রতি কোরবানির ঈদের পরের শনিবার বসে বিশেষ হাট। ওই হাটে ঢাকা থেকে ট্যানারির মালিকেরা এসে চামড়া কিনে নেন। এ বছর ঈদের পরদিন বৃষ্টি থাকায় প্রথম শনিবার বিশেষ হাট বসেনি। আগামী শনিবার বসবে বিশেষ হাট। বিশেষ হাট সামনে রেখে স্থানীয় ব্যসবাসীরা চামড়ার মজুত বাড়াচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, শম্ভুগঞ্জ চামড়ার বাজার ঘিরে আগে ৩০ থেকে ৩৫ জন স্থায়ী ব্যবসায়ী ছিলেন। ঈদ কেন্দ্র করে শত শত ব্যবসায়ী অস্থায়ীভাবে চামড়ার মজুত করতেন। এখন স্থায়ী ব্যবসায়ীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত শম্ভুগঞ্জ বাজারে ২০ হাজার চামড়া আনা হয়েছে। শনিবার দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরা বাজারে লক্ষাধিক চামড়া নিয়ে আসবেন। যেসব ব্যবসায়ীর সঙ্গে ট্যানারি মালিকদের ভালো যোগাযোগ, তাঁদের চামড়া বিক্রি হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। অনেকের চামড়া অবিক্রীত থেকে যায়। এক মাস চামড়া অবিক্রীত থাকলে খরচ আরও বাড়ে।

এবার ঈদের দিন থেকে ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলার ব্যবসায়ীরা এ বাজারে চামড়া এনে জড়ো করছেন। নেত্রকোনা জেলার শ্যামগঞ্জ বাজার থেকে গতকাল ৭০টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী সাধন রবিদাস। তিনি জানান, গত বছর এ ব্যবসায় তাঁর প্রায় ৬৩ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকায় এখন এটি ছাড়তে পারছেন না। লোকসান জেনেও আবার কেন বিনিয়োগ করেছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে সাধন বলেন, ‘এ কাজ ছাড়া আর কিছু শিখিনি। তাই ভবিষ্যতে সুদিন আসতে পারে ভেবে এখনো টিকে আছি।’

শম্ভুগঞ্জ বাজারের পুরোনো চামড়ার ব্যবসায়ী পান্থ লাল চৌহান বলেন, এ ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। ব্যবসার খরচ বেড়েছে। লবণের দাম প্রায় ১৯ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতিটি চামড়ায় খাজনা দিতে হয় ৩৫ টাকা। এরপর হাটের দিনে ট্যানারি মালিকদের পথ চেয়ে বসে থাকতে হয়।

শম্ভুগঞ্জ বাজারটি অনেক পুরোনো হলেও ভাড়া জায়গায় পরিচালিত হয়। এতে খরচ বেশি হয়। দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশনের কাছে স্থায়ী বাজারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ চামড়ার বাজার। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহজাহান বলেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হকের নির্দেশনায় ইতিমধ্যে স্থায়ী চামড়ার বাজারের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে দুটি ছাউনি নির্মাণ করা হবে। মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে। আগামী বছর থেকে নতুন জায়গায় স্থায়ীভাবে বাজারটি বসবে বলে আশা করছেন।