মানিকগঞ্জে ওষুধের দোকানে স্যালাইন নেই, হাসপাতালে অপ্রতুল

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়।

শয্যা সংকুলান না হওয়ায় অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগীর শিরায় দেওয়া স্যালাইনের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। চাহিদা বাড়ায় দেখা দিয়েছে স্যালাইনের সংকট। স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলোতে এসব স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালেও স্যালাইনের মজুদ অপ্রতুল।

গতকাল বুধবার বিকেলে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ঘু‌রে রোগীর স্বজন ও কর্তব্যরত নার্স এবং জেলা শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকানিদের সঙ্গে কথা ব‌লে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বল‌ছে, ক‌য়েক‌ দি‌নের ম‌ধ্যে এ সংকট কে‌টে যা‌বে।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের জলীয় অংশ কমে যায়। এতে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ কমে যায়। রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সাধারণত দশমিক ৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড স্যালাইন রোগীর শিরায় পুশ করতে হয়। চিকিৎসকেরা এটাকে ‘নরমাল স্যালাইন’ বলে থাকেন।

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা শহরের ছয়টি দোকানে ওষুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি স্যালাইন তৈরি করে; কিন্তু প্রায় এক মাস থে‌কে হার্ডম্যান ও নরমাল স্যালাইনের সরবরাহ ক‌মে‌ছে।

২৫০ শয্যাবি‌শিষ্ট জেনা‌রেল হাসপাতালের সামনে ইউনাইটেড মেডিসিন কর্নারের মালিক রাকিবুল ইসলাম বলেন, কোম্পানিগুলো সরকারি হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ করায় বাইরে দিতে পারছে না। এ কারণে প্রায় এক মাস ধরে স্যালাইন সরবরাহ নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির জেলা কমিটির সভাপতি সাজমুল হক বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে; কিন্তু ওষুধ কোম্পানিগুলো চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম স্যালাইন সরবরাহ করছে। ১০০টি স্যালাইনের প্যাকেট (প্রতি প্যাকেট ১ লিটার) চাইলে ১০টিও সরবরাহ করছে না।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ছয়টা পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬৬৫। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাই শেষে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৫১ জন। আগস্টে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৬৯ জনে।

গতকাল সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন। গতকাল সকাল পর্যন্ত নতুন ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫৭।

নতুন রোগীদের মধ্যে জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৪৫, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৫, সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭, সিঙ্গাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪, ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭, শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭, দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ এবং মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন রোগী ভর্তি হন। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে কেউ কেউ বাড়িতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালগুলো স্যালাইনের সংকটে পড়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার ডেঙ্গু ইউনিট করা হয়েছে। এসব রোগীর অনেকের শিরায় দিনে দুটি করে স্যালাইন দিতে হচ্ছে।

স্যালাইনের চাহিদা বাড়লেও হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট নেই বলে দাবি করেছেন ২৫০ শয্যাবি‌শিষ্ট জেনা‌রেল হাসপাতা‌লের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।