বিক্রেতা হাঁকলেন দেড় লাখ, ক্রেতা বললেন ৭৫ হাজার

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি হাটে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। মঙ্গলবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে তুমুল দর-কষাকষি। বিক্রেতা আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের মাঝারি আকারের একটি গরুর দাম হাঁকলেন দেড় লাখ টাকা। ক্রেতা একগাল হেসে জবাব দিলেন, ৭৫ হাজার টাকা দিতে পারবেন। আজ মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে এমন দর-কষাকষি চোখে পড়ল। বিক্রেতা যেভাবে অস্বাভাবিক অঙ্কের দাম হাঁকছেন, একইভাবে ক্রেতাও অস্বাভাবিক কম দাম দিতে চাইছেন।

প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পশুর হাট বসে। সদরের জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই হাটের অবস্থান। আজ দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা গেল, নছিমন, ছোট ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরবানির পশু আসছে। ভেতরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে হাট।

দিনাজপুরের বকুলতলা থেকে হাসান আলী নামের এক বিক্রেতা দুটি গরু নিয়ে এসেছেন হাটে। বেশ হৃষ্টপুষ্ট গরু দুটির দাম জিজ্ঞাসা করতেই হাসান বললেন, ‘দাম তিন শ।’ ক্রেতার প্রশ্ন, তিন শ? শুনেই বিক্রেতার ঝটপট উত্তর, ‘একেকটা দেড় লাখ।’ দাম শুনে ক্রেতা বললেন, ‘একেকটা ৮০ হাজার করে মোট ১ লাখ ৬০ দিমো।’ শুনে বিক্রেতা বললেন, ‘এই দামে বাছুরও পাবেন না। নিতে হলে দাম বাড়াতে হবে।’

পাশে সদর উপজেলার রায়পুর থেকে দুটি মাঝারি আকারের গরু এনেছেন রশিদুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, একেকটি গরুতে সাড়ে তিন মণ গোশত পাওয়া যাবে। গরু দুটির দাম চাইলেন ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। হাটের দক্ষিণে আরেকটি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সদর উপজেলার বড়গাঁও এলাকার কৃষক যতীন্দ্র বর্মণ। দাম চাইছেন ১ লাখ ১৫ হাজার। ক্রেতা হারিসুল ইসলাম ৮০ হাজার দিতে চাইছেন। ব্যাপক দর-কষাকষির পরও কিছুতেই দাম কমাতে চাইলেন না যতীন্দ্র। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন ক্রেতা।

হারিসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাট ঘুরে দেখলাম, অনেক গরু এসেছে। কিন্তু দাম অনেক বেশি চাইছে। আড়াই মণ ওজনের যে গরু গত বছর ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এবার তার দাম লাখ টাকার ওপরে চাওয়া হচ্ছে।’

হারিসুলের অভিযোগের প্রসঙ্গে যতীন্দ্র বর্মণ বললেন, ‘এবার গরুর দাম বেশি হবেই।’ নিজের গরুর দিকে ইশারা করে বললেন, ‘গতবার আমি এমন গরু ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার গরুর সব খাবারের দাম বেড়েছে। ২২ টাকা কেজির খইল ৪৫, ২৮ টাকা কেজির চিটাগুড় ৬০, ১৮ টাকা কেজির চালের খুদ ৪০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫০ টাকা মণের খড় এখন ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা কি সাধ করে দাম বেশি চাচ্ছি?’

পাশে দাঁড়িয়ে যতীন্দ্রর কথা শুনছিলেন বিক্রেতা মকবুল হোসেন। পশুর দাম বেশি চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বললেন, গবাদিপশুর খাবারের দাম বাড়তি। গরুর মাংসেরও দাম বেশি। সংসারের সব খরচ বেড়েছে। সব জিনিসের দাম বাড়লে কোরবানির গরুর দামও তো বাড়ে।

জেলার সালন্দর এলাকার হবিবর রহমান একটি গরু হাটে তুলেছেন। গরুর গলায় ঝুলছে ফুলের মালা। তাঁর দাবি, গরুটি হাটের সেরা গরু। তার আশপাশে অনেকেই ভিড় করছেন। হবিবর বললেন, ‘আমি নিজে হাতে একে লালন-পালন করেছি। এর পেছনে অনেক খরচ হয়েছে। ওজন আট মণ হবে। সাড়ে তিন লাখ হলে বিক্রি করব।’

ফেরার পথে দেখা গেল, হারিসুল ইসলাম হাট থেকে বের হচ্ছেন। সঙ্গে বিক্রেতা রশিদুল ইসলামের সেই দুটি গরু। কত দিয়ে কিনলেন জানতে চাইলে হারিসুল বললেন, ‘দুইটা ১ লাখ ৭০ হাজার পড়ল।’

জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতা পশু কেনাবেচার জন্য এখানে এসেছেন। তবে গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। এরপরও কেনাবেচা থেমে নেই।