নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৪ কর্মকর্তার বিদেশ সফর

চট্টগ্রাম ওয়াসা

ঠিকাদার বা সরবরাহকারীর অর্থায়নে বিদেশ সফর নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পরিপত্র জারি করে জানানো হয়, ঠিকাদার বা সরবরাহকারীর অর্থায়নে অবশ্যই বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করতে হবে। তবে নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চট্টগ্রাম ওয়াসার তিন কর্মকর্তাসহ চারজন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

মূলত ডিজিটাল মিটার সরবরাহ, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ–সংক্রান্ত ‘কারিগরি ও সফটওয়্যার প্রশিক্ষণ’ নিতে সংস্থাটির তিন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে ও কম্পিউটার প্রোগ্রামার লুৎফি জাহান। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন প্রতিনিধি। আগামী সোমবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে তাঁদের দেশ ছাড়ার কথা রয়েছে। সেখানে তাঁরা ১৫ দিন থাকবেন।

বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘অনেক আগেই কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এ সফরে সরকারের বা ওয়াসার কোনো খরচ হবে না। ডিজিটাল মিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই সব ব্যয় বহন করবে।’
কর্মকর্তাদের সফরের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফোন করা হয়। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৩ হাজার ডিজিটাল মিটার কেনার উদ্যোগটি অনুমোদন করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। ছয় মাসের মধ্যে মিটার বসানোর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। নির্ধারিত সময়ে মিটার স্থাপন করতে পারেনি ওয়াসা। পরে কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। মিটার স্থাপনে খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মিটার সরবরাহ করেছে ‘উইংস ইনভেস্টমেন্ট এলএলসি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে মাহবুবুল আলম মিটার স্থাপনের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। এর আগে ২০২২ সালের জুলাইয়ে অন্য একটি প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের আগে শিল্পকারখানা পরিদর্শনে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিন কর্মকর্তা। সেখানে পানি জীবাণুমুক্তকরণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। এবারের সফরের বিষয়ে মাহবুবুল বলেন, ডিজিটাল মিটার স্থাপন ও পরিচালনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি এ সফরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

অনেক আগেই কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এ সফরে সরকারের বা ওয়াসার কোনো খরচ হবে না। ডিজিটাল মিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই সব ব্যয় বহন করবেন।
মনোয়ারা বেগম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চট্টগ্রাম ওয়াসা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নতুন নয়। প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই বিদেশ সফর করেন কর্মকর্তারা। বিশেষ করে ২০১৯ সালে উগান্ডা সফর করে আলোচনায় এসেছিলেন। সেবার ওয়াসার ২৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ‘প্রশিক্ষণের’ জন্য পূর্ব-মধ্য আফ্রিকার দরিদ্র দেশ উগান্ডায় ভ্রমণ করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের আরও ১৪ জন কর্মকর্তা। এ সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ওয়াসা বোর্ডেরই কয়েকজন সদস্য। এটি সমালোচনাও তৈরি হয়।

সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চার কর্মকর্তার বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওয়াসার প্রকল্প মানেই বিদেশ সফর। কর্মকর্তারা বিদেশে যাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকেন।