বগুড়ায় বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা এল পাঠদান কার্যক্রম শুরুর পর

বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর পর পাঠদান বন্ধের ঘোষণা আসায় তীব্র শীতের মধ্যে বাড়ি ফিরে আসতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। আজ সোমবার সকালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মধ্যকাতুলী গ্রামেছবি: সোয়েল রানা

শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বগুড়ায় আজ সোমবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সকাল নয়টার দিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের এই ঘোষণার আগেই অনেক বিদ্যালয়ে প্রভাতি শাখার পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বিদ্যালয় খোলা রাখায় তীব্র শীতের মধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরের শিশুশিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হয়। সকাল নয়টায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণার পর শীতের মধ্যেই বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের।

বগুড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল ৯টায় জেলায় ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এক দিন আগেই পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল রোববার সন্ধ্যা থেকেই বগুড়ায় হিমশীতল আবহাওয়ায় ঘর থেকে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আগে থেকে বিদ্যালয় বন্ধের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আজ পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রভাতি শাখার শিক্ষার্থীদের শীত উপেক্ষা করে সকালে বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। এতে পাঠদান বন্ধের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের শীতের কষ্ট লাঘবে খুব একটা কাজে আসেনি।

আজ বেলা ১১টার দিকে বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, তাপমাত্রার বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের লিখিত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁদের বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেবেন। বগুড়া আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন সকাল নয়টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার প্রতিবেদন দেয়। তবে তিনি সকাল আটটার দিকে নিজ উদ্যোগে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে তাপমাত্রার প্রতিবেদন সংগ্রহ করে তা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ওই কর্মকর্তারা তাঁদের বিভাগীয় কর্মকর্তার পরামর্শে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে প্রভাতি শাখার পাঠদান কার্যক্রম শুরু হলেও জেলা প্রশাসনের কিছুই করার ছিল না।

অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীট মডেল স্কুল, টিএমএসএস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ শহরের নামীদামি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকাল আটটায় প্রভাতি শাখার পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা এসেছে সকাল নয়টায়। এতে তীব্র শীতের কষ্টের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হয়েছে।

বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী প্রথম আলোকে বলেন, প্রভাতি শাখার পাঠদান কার্যক্রম শুরুর পর বিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরও আগে বন্ধের নির্দেশ পেলে বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে নোটিশ দেওয়া যেত।

বগুড়া জিলা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জিয়াউল ইসলাম বলেন, এক দিন আগেই আশপাশের জেলায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই শীতের তীব্রতায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছিল না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই বিদ্যালয় বন্ধের উদ্যোগ নিতে বিলম্ব হয়েছে।

এদিকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনার পরও বেলা ১১টার দিকে শহরের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু ছিল। শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠের পাশে ইউনিক পাবলিক স্কুলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকেও পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখতে দেখা যায়। শহরের মালতীনগর বকশিবাজার মোড়ে ব্র্যাক একাডেমি স্কুলেও দুপুর ১২টার দিকে পাঠদান কার্যক্রম চালু ছিল।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় প্রাথমিক স্তরের ১ হাজার ৬০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় সকাল নয়টায়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠদান বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সকাল নয়টা বেজে গেছে। রাতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে আরও ভালো হতো বলে মনে করেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।