ঢলের অপেক্ষায় জেলেরা 

উজান থেকে নদীতে ঢল নামলে মাছ মিলবে, মাছ মিললে জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে।

পানিপ্রবাহ না থাকায় তিস্তা নদীতে জেগে উঠেছে বালুচর। নৌকা চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। গত সোমবার লালমনিরহাটের দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে
ছবি: প্রথম আলো

তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। ফলে নদীতে মাছও পাওয়া যায় না। উজান থেকে ঢল নামলে মাছ মিলবে, মাছ মিললে জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। সেই ঢলের আশায় আছেন স্থানীয় জেলেরা। 

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। গত সোমবার দুপুরে ওই এলাকা ঘুরে তিস্তা নদীর পানিস্বল্পতা চোখে পড়ে। ব্যারাজের উজানে জেগে উঠেছে বালু চর। ভাটিতেও বালুচর। ব্যারাজের ভাটিতে মাছ ধরার নৌকাগুলো ডাঙায় তোলা। অনেক নৌকা বালুচরে উল্টো করে রাখা। নদীর পারে তাঁবু করে আছেন জেলেরা। সেখানে থেকে শুকিয়ে যাওয়া নদীর স্বল্প পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করেন অনেকে। কিন্তু মাছ মিলছে কম। তাতে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো দায়।

তিস্তায় মাছ ধরে সংসার চালান হাতিবান্ধা উপজেলার দোয়ানী গ্রামের আবদুল জলিল (৫৫)। স্ত্রী, মা, ছেলেসহ তাঁর চার সদস্যের পরিবার। তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আবদুল জলিল বলেন, ‘২০ বছর থাকি তিস্তা নদীত মাছ মারি সংসার চালাই। এইবার নদী এমন করি শুকাইছে, মাছ পাওয়া যায়ছে না। সারাদিন শুকান নদীত মাছ মারি বেচে ২০০ টাকায় পাই না। ওই টাকায় কি সংসার চলে? একটা ঢল আইসলে মাছ পাওয়া যাইবে। এলা হামরা ঢলের বাদে অপেক্ষা করছি।’

ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাঁইসপুকুর গ্রামের জেলে মকলেছার রহমান (৪০) বলেন, ‘১০ থাকি ১২ বছর ধরে এই নদীত মাছ ধরি। প্রায় তিন মাস থাকি নদীত পানি নাই, মাছও নাই। পানি থাইকলে মাছ উজি আইসে। হামরা অপেক্ষা করেছি কত্তন পানি আইসে।’

দোয়ানী গ্রামের সোবহান আলী (৪৫) বলেন, এই ব্রিজের আশপাশে ২৫০টার বেশি জেলে পরিবার আছে। এর বাইরেও এক হাজারের বেশি পরিবার মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায়। নদীতে পানি না থাকায় মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। তাতে করে একজন জেলে সারাদিন মাছ ধরে ২০০-৩০০ টাকা আয় করছেন। তাতে তাঁদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। নদীর পানি বাড়লে মাছ পাওয়া যাবে। 

স্থানীয় জেলেরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে ও বর্ষার সময় তিস্তা নদীতে মাছ কম পাওয়া যায়। ওই সময়টাতে জেলেদের আয়রোজগার কম হয়। নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে এ সংকট থাকে না। তখন মাছ বেশি ধরা পড়ে। তিস্তা নদীতে ধরা পড়া মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈরালী, আইড়, বোয়াল, চিতল, কালবাউশ, বাটা ও বাগাড়। এখানে প্রতি কেজি বৈরালী মাছ বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। আইড়ের কেজি ৮০০-৮৫০ টাকা। 

মাছ ব্যবসায়ীরা নদীর ধার থেকে ওই মাছ কিনে নিয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করেন। নদীতে মাছ না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও দুর্দিন চলছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ্দৌলা বলেন, এখন প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ কিউসেক পানি আসছে। দিনে ওই পানি সেচকাজে ব্যবহার করা হয়। নদীর প্রবাহ ধরে রাখতে রাতে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। উজানে বৃষ্টি হলে পানি পাওয়া যাবে।