‘সোনার বিস্কুট’ দিয়ে প্রতারণা, মোটরসাইকেল ও গামছার ছবিতে প্রতারক ধরা

সুনামগঞ্জে ভুয়া সোনার বিস্কুট দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে আটক দুই ব্যক্তি। আজ দুপুরে সদর উপজেলার রাধানগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বিদেশ থেকে এসেছেন। সঙ্গে এনেছেন ‘সোনার বিস্কুট’। এখন চিকিৎসার প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে এই বিস্কুট বিক্রি করতে হবে। না হলে চিকিৎসা সম্ভব নয়। এমন মানবিক সংকটের কথা শুনে এক শিক্ষক সেটি কিনে নেন। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে দেখা যায়, সেই বিস্কুট নকল। প্রতারণার শিকার শিক্ষক দ্বারস্থ হন পুলিশের। পুলিশ এক সপ্তাহের চেষ্টায় আটক করেছেন দুই প্রতারককে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রাধানগর এলাকা থেকে আজ বুধবার দুপুরে ওই দুই প্রতারককে আটক করেন সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মোহাম্মদ হানিফ মিয়া। প্রতারকদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর মল্লিকপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫) এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাঝাইর গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে ওমর ফারুক ওরফে সেলিম (৪৫)। আলমগীর সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। ওমর ফারুক বেকার। এই দুজনকে সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সুপার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন ট্রাফিক পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ মিয়াকে।

পুলিশ জানায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মল্লিকপুর এলাকায় সুরমা নদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুজ জহুর সেতু এলাকায় ভুক্তভোগী শিক্ষক প্রতারকদের পাল্লায় পড়েন। ওই সেতুতে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। মোটরসাইকেলগুলো দুজন করে যাত্রী নিয়ে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায় যায়। ১ সেপ্টেম্বর এখান থেকে দুজন যাত্রী নিয়ে তাহিরপুরের উদ্দেশে রওনা দেন চালক আলমগীর। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন তাহিরপুরের বাদাঘাট গ্রামের ওই শিক্ষক। অন্যজন ওমর ফারুক। পথে ওমর ফারুক ওই শিক্ষককে তাঁর ‘সোনার বিস্কুট’-এর কথা জানান। তাঁর এই বিপদের কথা শুনে ওই শিক্ষক সেটি কিনতে আগ্রহ দেখান। মোটরসাইকেলের চালক আলমগীরও তাঁকে উৎসাহ দেন। পরে ১৫ হাজার টাকায় সেটি কেনেন ওই শিক্ষক। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে এলাকার এক সোনার দোকানে যাচাই করে দেখেন, সেটি নকল। এরপর তিনি বিষয়টি তাঁর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পুলিশ সুপারকে জানান। পুলিশ সুপার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন ট্রাফিক পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ মিয়াকে।

মোহাম্মদ হানিফ জানান, ওই শিক্ষক আলামত হিসেবে দুটি ছবি দিয়েছিলেন। একটি ওমর ফারুকের, সেটিতে তাঁর মুখে মাস্ক এবং গলায় গামছা প্যাঁচানো ছিল। কিন্তু ছবিতে তাঁকে চেনার উপায় নেই। দ্বিতীয় ছবিটি ছিল ওই মোটরসাইকেলের সামনের মিটারের অংশের। এই দুই ছবি নিয়েই তিনি ওই সড়কে প্রতারকদের খুঁজতে শুরু করেন। আজ বুধবার দুপুরে তিনি সুরমা সেতুতে দায়িত্ব পালনকালে দেখেন, একটি মোটরসাইকেলে এক আরোহী মাস্ক পরা ও গলায় গামছা প্যাঁচানো। তাহিরপুরের দিকে যাচ্ছেন। তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ওই মোটরসাইকেলের পিছু নেন। রাধানগর এলাকায় গিয়ে সেটিকে আটকান। পরে ছবির সঙ্গে সব মিলে যায়। এরপর আরোহী ও ওই মোটরসাইকেলের চালককে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ মিয়া বলেন, ‘ওই মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী একটি প্রতারক চক্র। এই কাজে আরও কেউ যুক্ত কি না, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সবাইকে ধরার চেষ্টা করা হবে।’