কালীগঞ্জে ইউএনও লাঞ্ছিতের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নামে মামলা

মারধর ও ভাঙচুরের পর গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভিড় জমে যায়। শনিবার দুপুরে
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে গাড়ি রাখতে নিষেধ করায় সরকারি কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের ওপর হামলা এবং ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে আনসার সদস্য আকরাম হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার প্রধান আসামি হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মো. জাকির হোসেন (৪৭), আকরাম হোসেন (৪৮), সিদ্দিকুর রহমান (৪৩), মো. কাজল (৩৪), মো. কামাল হোসেন ফরাজী (৩০), মো. হেকিম (৩৫), ফয়সাল ফকির (৪৫), মো. কালাম (৪০), জাহাঙ্গীর মেম্বার (৩০), রুবেল পালোয়ান (৩২), মনির হোসেন (৩৮), জাহিদুল হোসেন (২৮), সিরাজ উদ্দিন (৪৫) ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি।

মামলার এজাহার, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শনিবার দুপুরে এক স্মরণসভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। স্মরণসভা উপলক্ষে দুপুরে বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন। মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতর জড়ো হন।

ওই সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় কন্যা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল। প্রথমে উপজেলা পরিষদের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি চত্বরের বাইরে নিয়ে রাখার অনুরোধ করেন; কিন্তু নেতা-কর্মীরা এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে ইউএনও আজিজুর রহমান নিজে সেখানে আসেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে ডেকে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ লোকজন উপজেলা পরিষদে আসবেন। সম্ভব হলে নেতা-কর্মীদের গাড়ি যেন বাইরের খোলা জায়গায় নিয়ে রাখা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান উচ্চ স্বরে বাক্য বিনিময় শুরু করেন ইউএনওর সঙ্গে। সে সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এসে ইউএনওসহ তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর চড়াও হন।

একপর্যায়ে তাঁরা ইউএনওর শার্ট ধরে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন সরকারি কর্মচারী ও আনসার সদস্যরা ইউএনওকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তাঁদের ওপর হামলা চালান নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ইউএনওর কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইটপাটকেল মারতে থাকেন। এতে কয়েকটি জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান।

আরও পড়ুন