সিরাজগঞ্জের যমুনার পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ রয়ে গেছে

সিরাজগঞ্জের যমুনার নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও পানিবন্দী আছে দুই হাজার পরিবার। আজ সকালে সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে
ছবি:প্রথম আলো

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও আজ রোববার সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেও এখনো জেলায় পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যমুনাতীরের ৫টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার ২ হাজার পরিবারের প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকাল ছয়টার দিকে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৩ দশমিক ১২ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর দুপুর ১২টায় ১৩ দশমিক ১০ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২ সেন্টিমিটার। আবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমেছে ২ সেন্টিমিটার। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেলকুচি উপজেলার রান্ধুনীবাড়ি, চকমকিমপুর, সদর উপজেলার মুলিবাড়ি ও চরপাইকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামগুলোয় নতুন নতুন রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামের মানুষ বর্তমানে যাতায়াত করছে নৌকা ও ভেলায়।

বেলকুচির উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছোনিয়া সবুর বলেন, ‘যমুনা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা সরেজমিন দেখে তাদের তালিকা তৈরি করে জেলায় পাঠিয়েছি।’

সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সহায়তার জন্য জেলায় পাঠিয়েছি।’

সিরাজগঞ্জের যমুনার নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও পানিবন্দী আছে দুই হাজার পরিবার। আজ সকালে সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে গতকাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রোপা আমন ২৮৫ হেক্টর, সবজি ৪৩ হেক্টর, আউশ ৪০ হেক্টর, বীজতলা ৩২ হেক্টর, কলা ৫ হেক্টর ও আখ ২৫ হেক্টর। এ ছাড়া জেলার চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। উজানের জেলাগুলোয় যমুনার পানি ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলোয় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে যমুনাতীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই হাজার পরিবারের তালিকা হাতে পেয়েছি। এতে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাদের সহায়তার আওতায় আনা হবে।’