নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর ১৭ জনপ্রতিনিধির আবেদন

কক্সবাজার জেলার মানচিত্র

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে আবেদন করেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ১৭ জনপ্রতিনিধি। সবাই এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের পক্ষের লোক।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে আবেদনটি পৌঁছে দেন চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম ও পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যান কামাল হোছাইন। আবেদনে এই দুই চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করেন যথাক্রমে ১ ও ১১ নম্বরে।

সিইসির কাছে আবেদন দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিনিয়ত জনপ্রতিনিধিদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী (চেয়ারম্যান) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পক্ষে কাজ করতে বিভিন্ন মহল থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এই শঙ্কায় ১৭ জনপ্রতিনিধির পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদনটি করা হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাঁর পক্ষাবলম্বন না করলে অস্ত্র-মাদক উদ্ধার, অফিস পোড়ানোসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে বা তুলে নিয়ে প্রশাসনিক হয়রানি-নির্যাতনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধরনের চাপ প্রয়োগ ও অপতৎপরতা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বড় অন্তরায়।

আবেদনে আরও বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাঁরা (জনপ্রতিনিধিরা) সেই লক্ষ্যে নিজ নিজ ইউনিয়নে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবেদনে স্বাক্ষরকারী ১৭ জনপ্রতিনিধির মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচজন, নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাতজন ও জামায়াত সমর্থিত দুজন ইউপি চেয়ারম্যান আছেন। এ ছাড়া দুজন জেলা পরিষদ সদস্য ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য তানিয়া আফরিন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের মেয়ে।

আবেদনে ১৩ নম্বরে স্বাক্ষর করেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শওকত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের কর্মী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। একটি মহল হুমকি দিচ্ছে যে কল্যাণ পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। নইলে মামলায় জড়িয়ে বা তুলে নিয়ে হয়রানি করা হবে। তাই জীবনের নিরাপত্তায় শঙ্কিত হয়ে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন করেছি।’

কক্সবাজার-১ আসনে লড়ছেন মোট সাতজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হোসনে আরা, ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কমরউদ্দিন আরমান ও সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদকে। ঋণ খেলাপের অভিযোগে সালাহ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। ২৩ ডিসেম্বর কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পক্ষে নির্বাচনে নামার ঘোষণা দেয় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। পরদিন থেকে অচেনা ইবরাহিমকে নিয়ে চকরিয়া-পেকুয়াতে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ শীর্ষ নেতারা।

এদিকে পেকুয়ার একটি নির্বাচনী পথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০ ডিসেম্বর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমকে। সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দিয়ে জাফর আলমকে দলের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হবে মর্মে জানান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পক্ষে নেমেছে। যেহেতু এ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই।