রাস্তার কাজ আর শেষ হয় না

খোয়া বিছিয়ে রাখা সড়কে যানবাহন চললেই ধুলায় ঢেকে যায় চারপাশ। গতকাল মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর চরমসুরা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

দুই বছর আগে সড়কটি খানাখন্দে ভরা ছিল। সংস্কারকাজের জন্য পুরোনো পিচঢালাই তুলে ফেলা হয়। সেভাবেই পড়ে থাকে কয়েক মাস। এরপর বালু ফেলে ইটের খোয়া বিছিয়ে আবারও ফেলে রাখা হয়েছে। চার মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১৬ মাসেও সেই সংস্কারকাজ শেষ হয়নি।

এমন চিত্র মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের রমজানবেগ-চরমুসার সড়কে। কার্পেটিং ছাড়াই মাসের পর মাস সড়কটি ফেলে রাখায় যানবাহনের চাকায় ইট-বালু গুঁড়া হয়ে গেছে। যানবাহন চলাচলের সময় বা সামান্য বাতাসেও এসব ধুলা উড়ে ফসলি জমি, বাড়িঘর, গাছপালায় জমেছে লাল আস্তর। ভাঙা ও ধুলায় ভরা সড়কে পথচারীদের দুর্ভোগও সীমাহীন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার রমজানবেগ এলাকা থেকে চরকেওয়ার ইউনিয়নের আলিরটেক পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮৫০ কিলোমিটার সড়কের মেরামত ও প্রশস্তকরণের কাজটি পেয়েছে মা মৌমিতা নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কাজটি ২০২২ সালের অক্টোবরে শুরু করে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় গত বছর মেয়াদ বাড়িয়ে জুন পর্যন্ত সময় নেন ঠিকাদার। তবে সে সময় পেরিয়ে আরও সাত মাস পার হলেও সড়কের কাজ শেষ হয়নি।

ধুলাবালুতে ঘরে থাকতে পারছি না। ঘরের খাবারদাবার, জামাকাপড়, আসবাব—সবকিছু ধুলাবালুতে নষ্ট হচ্ছে। ঘরের সবার সর্দি-কাশি লেগেই আছে।
আল আমিন হোসেন, কুয়েত গ্রামের বাসিন্দা

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌর এলাকার রমজানবেগ, চরকেওয়ার ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম, আধারা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া এলাকার ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ নিয়মিত এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া সবজি ও মালামালবাহী বড় বড় ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। দেড় বছর আগে রাস্তার উন্নয়নকাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির শুরু হয়। কিছুদিন কাজ করে কয়েক মাস ফেলে রাখছেন ঠিকাদার। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটিতে যানবাহন চলাচল করলেই ধুলাবালু উড়ে সড়ক অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। ধুলা বাতাসে উড়ে রাস্তার পাশের বাড়িঘর, গাছপালা, দোকানপাট, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ফসলি জমি ও ঝোপঝাড়ের ওপর পড়ছে। সড়কের পাশের সবজির জমি, ঝোপঝাড় ও গাছপালার পাতায় লালচে আস্তরণ পড়েছে। এতে পাল্টে গেছে বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদের দেয়ালের রং। ধুলা থেকে বাঁচতে কেউ কেউ পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন।

কাওয়াদি এলাকার বাসিন্দা নীরব আহমেদ বলেন, সড়কে যখন খানাখন্দ ছিল, তখনো ভালো ছিল। কাজ করার নামে সড়কের বারোটা বাজিয়ে রেখেছে। ইটের গুঁড়ার লাল ধুলায় সড়কের দুই পাশের জমির শাকসবজি নষ্ট হচ্ছে। ধুলার কারণে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। গাড়িতে উঠলে ঝাঁকুনিতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

কুয়েত গ্রামে সড়কটির পাশেই বাড়ি আল আমিন হোসেনের। সড়কের ধুলা উড়ে তাঁর বাড়ির বেড়া ও টিনের চালে লাল আস্তর জমেছে। গতকাল পাম্পের পানি পাইপ দিয়ে ছিটিয়ে বাড়ি পরিষ্কার করছিলেন। ধুলা কমাতে রাস্তায়ও পানি ছিটাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইটের গুঁড়ার লাল ধুলাবালুতে ঘরে থাকতে পারছি না। ঘরের খাবারদাবার, জামাকাপড়, আসবাব—সবকিছু ধুলাবালুতে নষ্ট হচ্ছে। ঘরের সবার সর্দি-কাশি লেগেই আছে।’

কাজ ফেলে রাখার বিষয়ে মাসখানেক আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বর্ষা মৌসুমে কার্পেটিংয়ের কাজ করা যায় না। এ ছাড়া নির্বাচন ও টাকাপয়সার কিছু ঘাটতি থাকায় কাজে বিলম্ব হয়েছে। এখন মালামাল এনেছেন। তখন দুই সপ্তাহের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। রমজানবেগ থেকে উত্তরচর মসুরা এলাকার মাত্র ৪০০ মিটার সড়কের কাজ করে ২০-২৫ দিন ধরে আবারও কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার। এ বিষয়ে জানতে গতকাল একাধিকবার আবদুল আজিজের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি।

কাজ শেষ করতে নিয়মিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শফিকুল আহসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুনেছেন, কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালামাল নিয়ে এসেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলেছেন ঠিকাদার। এবার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন ভূঁইয়ার বাড়িও সড়কটির পাশেই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তার কাজ ফেলে রাখায় সাধারণ মানুষের কতটা ভোগান্তি আমি জানি। রাস্তার বিষয় নিয়ে এলজিইডির প্রকৌশলী, ঠিকাদারের সঙ্গে বহুবার কথা বলেছি। উপজেলার মাসিক উন্নয়ন সভায়ও তুলে ধরেছি।’