পাঁচ মাসেও ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রধান আসামি

আলোচিত এই জোড়া খুনের প্রধান আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

দুই কৃষক হত্যা মামলার প্রধান আসামি শ্রমিক লীগ নেতা উজ্জ্বল সরদার
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই কৃষক হত্যা মামলার প্রধান আসামি শ্রমিক লীগের নেতা উজ্জ্বল সরদারকে গত পাঁচ মাসেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার কয়েকজন আসামি কারাগারে গেলেও তাঁরা জামিনে বাইরে চলে আসেন।

ঘটনার পর প্রধান আসামি উজ্জ্বল সরদারের অস্ত্র হাতে সড়কে হেঁটে চলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিল। পুলিশ অভিযান চালিয়ে উজ্জ্বলের ঘর থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, ছয়টি রামদা ও একটি তরবারি উদ্ধার করে। আলোচিত এই জোড়া খুনের প্রধান আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

গত বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে দৌলতপুরের হাটখোলায় হামলা চালিয়ে শরিফুল মালিথা (৪৫) ও বজলু মালিথা (৫৫) নামের দুই কৃষককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ১৫ জন। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে নিহত বজলু মালিথার ছেলে নাহিদ হোসেন বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখ ও ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি উজ্জ্বল সরদার দৌলতপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

দৌলতপুর থানা-পুলিশ সূত্র বলছে, ঘটনার পর পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর উজ্জ্বল সরদারকে ধরতে ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। উজ্জ্বল মুঠোফোন, এমনকি কোনো প্রকারের ডিভাইসই ব্যবহার করেন না। এ জন্য তাঁকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষক হত্যার একটি ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। তাতে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের একজন জামিনে আছেন। উজ্জ্বল সরদারের পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে বিভিন্ন বন্দরে পাঠানো হয়েছে, যাতে দেশের বাইরে চলে যেতে না পারেন। আগামী মাসের শেষের দিকে এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হতে পারে।

উজ্জ্বল সরদার সম্পর্কে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি একসময় পদ্মার চরের পান্না লাল চাঁদ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে উজ্জ্বল দেশে ফেরেন। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহানের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেন। সরওয়ার জাহান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর উজ্জ্বলকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন। এ ছাড়া পদ্মার বাঁধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজে ঠিকাদারিও করছেন। এ কাজ নিয়ে নানা অভিযোগও আছে। এলাকায় তরুণ ও যুবকদের নিয়ে একটা বাহিনী গঠন করেছেন, যাঁরা পদ্মা নদীতে বালুর ব্যবসার কাজ করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ কথা বলতেও ভয় পান।

এর আগে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচার দাবি করেন।

নিহত শরিফুলের ভাবী আসমা খাতুন বলেন, ‘উজ্জ্বল সরদার সবকিছুর লিডার। ওই তো সব ক্যাডার নিই আইসি মাইরলো। দিনে-দুপুরে সব দেখনু। সামনে সব হইল। আমার ছোট মেইডি ওদের পা জড়ি ধইরলো। কেউ কুনু কথা শুনল না। তাদের সবার হাতে বড় বড় হাইসু, ঢাল আর সবার কাঁধে ব্যাগ ছিল। গুলিও করেছিল।’