কমেছে খেলার মাঠ, ভবনের ছাদেও টার্ফ

টার্ফের মাঠে খেলায় মেতেছে তরুণেরা। চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর টি অ্যান্ড টি কলোনির খুলশী এনফিল্ড টার্ফে। ৪ জুন রাত নয়টায়জুয়েল শীল

চারদিক ঘেরা লোহার খাঁচায়। এর ভেতরে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ। দুই দলে ভাগ হয়ে মাঠে নেমে পড়েন খেলোয়াড়েরা। চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে এ ধরনের কৃত্রিম ঘাসের মাঠ বা টার্ফ মাঠ। মূলত নগরে খেলার মাঠ কমে যাওয়ার কারণেই বাণিজ্যিকভাবে এসব মাঠে খেলাধুলা করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। শুরুতে শুধু ফুটবল খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন টার্ফগুলোকে স্পোর্টস জোনে রূপান্তর করে ক্রিকেট, টেবিল টেনিস, পুল, পেইন্ট বল, ব্যাডমিন্টনসহ নানা খেলাধুলা হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম টার্ফ কোর্ট গড়ে ওঠে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায়। ‘চট্টোটার্ফ’ নামে এই টার্ফটি এখন ২০ হাজার বর্গফুটের গেম জোন। চট্টগ্রামের প্রথম বাণিজ্যিক টার্ফ হলেও এটি চট্টগ্রামের প্রথম টার্ফ নয়। এর আগে ২০১৮ সালে নিজেদের খেলাধুলার জন্য বায়েজিদ এলাকায় ৩৫ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে টার্ফ কোর্ট তৈরি করেছিল একটি শিল্প গ্রুপ।

বর্তমানে নগরের অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক টার্ফ গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ টার্ফেই খেলোয়াড়দের আনাগোনা সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনের বেলায় প্রতি ঘণ্টার জন্য গড়ে আট শ থেকে এক হাজার টাকায় এসব টার্ফ ভাড়া নিতে হয়। তবে রাতের বেলায় খরচ দেড় গুণ বেশি। নগরের দুই নম্বর গেট, জিইসি, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, রাহাত্তারপুল, কাট্টলীসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব টার্ফ। পাশাপাশি মাঠের অভাবে এখন ভবনের ছাদেও গড়ে উঠেছে টার্ফ।

টার্ফে খেলতে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব টার্ফে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাব্যবস্থা কম। বর্তমানে অনেক টার্ফ কোর্টে নিম্নমানের টার্ফ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অনেকে আঘাত পান। ভবনের ছাদে টার্ফগুলোতে ঝুঁকি অনেক বেশি। আর খরচ বিবেচনায় টার্ফে খরচ অনেক বেশি। এরপরও মাঠ কমে যাওয়ার কারণে টার্ফমুখী হচ্ছে সবাই।

মাঠ নেই, ছাদে টার্ফ

ভবনের ছাদের ওপর টার্ফ। ৪ জুন রাতে নগরের চক বাজারের বালি আর্কেডের সিক্স সিটি টার্ফে
জুয়েল শীল

শুরুতে বাণিজ্যিকভাবে টার্ফগুলো গড়ে তোলা হয়েছিল বিভিন্ন খালি জায়গায়। কিন্তু নগরে উল্লেখযোগ্য হারে মাঠ কমে যাওয়ার কারণে এখন বিভিন্ন ভবনের ছাদেও টার্ফ গড়ে তোলা হয়েছে। গত এক বছরে এমন টার্ফের সংখ্যা পাঁচটি। যদিও ভবনের ছাদে এ ধরনের টার্ফে খেলোয়াড়দের ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি ভবনের জন্যও তা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে মাঠের অভাবে এই ব্যবস্থা নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিয়েই টার্ফগুলো তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি টার্ফে খেলোয়াড়দের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। নগরের চকবাজার এলাকায় ফরচুন টাওয়ারে ‘সিটি গ্রাউন্ড’ টার্ফ ও বালি আর্কেড সুপার মলের ছাদে ‘সিক্সসিটি’। দুটি টার্ফে প্রতিদিন শতাধিক খেলোয়াড়ের আনাগোনা।

বালি আর্কেডের ১১ তলায় ছাদের একাংশ নিয়ে সিক্সসিটি এবং ফরচুন টাওয়ারের ৯ তলার একাংশ নিয়ে সিটি গ্রাউন্ড। সিটি গ্রাউন্ড টার্ফের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নগরের মাঠের অভাব। খেলাধুলার উন্মুক্ত মাঠ কমে গেছে। তাই নিজেদের খেলাধুলার জন্য ২০২৩ সালের জুন মাসে টার্ফটি করা হয়েছে।

বাণিজ্যিকভাবেও খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাও রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টার্ফগুলোতে ফুটসালের পাশাপাশি ছয়জনের জন্য বাস্কেটবল কোর্টের ভাড়া ১০০০ টাকা, ব্যাডমিন্টন কোর্টের ভাড়া ৫০০ টাকা, পেইন্ট বল জনপ্রতি দিতে হয় ২০০ টাকা এবং গেমিং স্ক্রিনের জন্য জনপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

নামমাত্র মাঠ নগরে

একসময় নগরে প্রতিটি মহল্লায় ছোট-বড় মাঠ থাকলেও গত ১০-১৫ বছরে মাঠের সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে নগরে উল্লেখযোগ্য উন্মুক্ত মাঠ বলতে রয়েছে কেবল আউটার স্টেডিয়াম মাঠ, প্যারেড মাঠ, শহীদ শাহজাহান মাঠ, লালদীঘি মাঠ, পলোগ্রাউন্ড মাঠ, জাম্বুরী মাঠ, জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠ ও হালিশহর আবাহনী মাঠ। মাঠ কমে যাওয়ায় ছোট পরিসরে টার্ফে ঝুঁকেছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

ছোট পরিসরের ফুটবল সারা বিশ্বে ফুটসাল নামে পরিচিত। ১৯৮৯ থেকে ফুটসাল বিশ্বকাপের ৯টি আসরও আয়োজন করেছে ফিফা। তবে বাংলাদেশে এখনো আলাদাভাবে ফুটসালের জন্য সেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে এএফসি নারী ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিল নারী ফুটবল দলের সাবিনা-কৃষ্ণারা।

টার্ফে স্থানীয়ভাবে ফুটসাল প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামে। তবে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে টার্ফ থেকেই খেলোয়াড় উঠে আসতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে টার্ফের ব্যবস্থাপনা কিংবা টার্ফ স্থাপন নিয়ে এখনো কোনো নীতিমালা নেই।  

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালার বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। জেলা প্রশাসনেরও একটি টার্ফ বাকলিয়ায় রয়েছে। প্রতিযোগিতার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।