মির্জাগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্প
বিদ্যুৎ–বিশুদ্ধ পানি নেই, দুর্ভোগে ৩৫ পরিবার
মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৫টি পরিবার থাকে। এক বছর আগে বরাদ্দ দিলেও আজও বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়নি।
বিদ্যুতের খুঁটি, তার, বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা সবই আছে, নেই শুধু বিদ্যুৎ। সন্ধ্যা হলে আশপাশ এলাকা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও ওরা থাকে অন্ধকারে। শিশুদের পড়াশোনা করতে হলে হারিকেন বা কুপিবাতি জ্বালাতে হয়। প্রচণ্ড গরমে রাত-দিন সব সময় কষ্ট পায় তারা। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।
এভাবে এক বছর ধরে বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে ৩৫টি দুস্থ পরিবারের শতাধিক মানুষ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘরে আশ্রয় পেলেও সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব পরিবার। এই চিত্র পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের রামপুর আজাহার হাওলাদারের বাড়ির পশ্চিম পাশে সরকারি জমিতে ১৫টি গৃহহীন পরিবারের জন্য ৫ ইউনিটবিশিষ্ট তিনটি পাকা ব্যারাক এবং একই গ্রামে ২০টি পরিবার পুনর্বাসনের জন্য রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে ৫ ইউনিটবিশিষ্ট চারটি পাকা ব্যারাক নির্মাণ করেন নৌবাহিনীর সদস্যরা।
যথাসময়ে এটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে ব্যারাকগুলো গৃহহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দিতে কয়েক বছর দেরি হয়। তবে গত বছর ২০২২ সালে মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসন সাতটি ব্যারাক ৩৫টি গৃহহীন পরিবারকে থাকার জন্য বরাদ্দ দেয়।
সম্প্রতি দেখা গেছে, রামপুর আজাহার হাওলাদারের বাড়ির পশ্চিম পাশে সরকারি জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকের প্রতিটি ইউনিটে চারটি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য দুটি কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নাসরিন বেগম বলেন, ‘পায়রা নদীতে বাড়ি-ঘর সবই গেছে। অনেক বছর ধরে আশ্রয়হীন ছিলাম। গত বছর রামপুর গ্রামের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের (ব্রাক হাউসে) একটি কক্ষে আশ্রয় পেয়েছি। আমার দুটি ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। বড় ছেলে নাঈম সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে পড়তে পারে না। বাচ্চাদের গরমে অসুখ লেগেই থাকে।’
একই ধরনের সমস্যার কথা জানালেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্য বাসিন্দা হাওয়া বেগম, রুমা আক্তার, মন্নান মুন্সী, ইলিয়াস হোসেন। হাওয়া বেগম বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে মীম রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে কুপিবাতির আলোয় যতটুকু পড়া যায় ততটুকুই পড়ে। গরমের তীব্রতা বাড়লে এখানে বসবাস করা যায় না। তখন বাধ্য হয়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে ঘুমাতে হয়।
ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘পাকা ঘরে বসবাস করি ঠিকই। কিন্তু এভাবে বসবাস করা যায় না। এখানে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ নেই। শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। পুরোনো লাইন বাদ দিয়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ করে প্রত্যেকে কক্ষের ভেতর নতুন করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করেছি। কিন্তু মিটার স্থাপন না হওয়ায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘ওয়ারিং (বিদ্যুতের তার টানা, সুইচসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বসানো) শেষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদস্যরা নিজ নিজ পরিচয়পত্র, বরাদ্দপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করলেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যাবে।’
এ বিষয়ে মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান লাভলু বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে গরমে ও পানিতে কষ্ট পাচ্ছে। তাদের কষ্ট লাঘবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা উচিত। এ ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে।