বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সেমিস্টার ফি কমানো, ক্লাস উপস্থিতি বাতিল, শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করাসহ ৩১ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ৩১ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করে অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মির্জা আবু সাঈমের সভাপতিত্বে ৩১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক অনিমা জামান। এ সময়ে বক্তব্য দেন শিক্ষাপ্রযুক্তি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুহতামিম হাওলাদার, শিক্ষাপ্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আয়মান আসিফ, ছাএলীগের সহসভাপতি সাদিদ আহমেদ ও আনারুল ইসলাম প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনিমা জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স প্রায় ছয় বছর। এখন পর্যন্ত স্থানীয় ক্যাম্পাস করতে পারেনি। ছাত্রছাত্রীদের হল নেই। এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে হল করা হয়েছে। যেখানে পানির ব্যবস্থা ভালো নয়। আমরা একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অথচ আমাদের জন্য দেওয়া ইন্টানেটের গতি নেই। শিক্ষক–সংকটের কারণে নিয়মিত সব ক্লাস হচ্ছে না। রিটেক পরীক্ষার ২১ হাজার ৭৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে ক্লাসে এবং হলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকার আমাদের জায়গা দিয়েছে অথচ স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো নিয়ে গেলে তাঁরা কোনো কথা না বলায় সোমবার সকাল ৯টা থেকে একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। সড়কে না এসে ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান করার নির্দেশ দেয় পুলিশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপচার্য মোহাম্মদ মাহফুজুর ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। উপাচার্য পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াননি তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এর আগেও অনেকবার তাঁরা বিভিন্ন দাবি জানালে উপাচার্য সমাধানের আশ্বাস দেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাবিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। পরে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সাতজনের নাম উল্লেখ করে উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করে। এ ঘটনায় উপাচার্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। মূলত ওই ঘটনায় দোষীরা যাতে পার পেয়ে যায় বা ওই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের কিছু নেতা–কর্মী বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এই আন্দোলনে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নেই বলে দাবি শিক্ষকদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মোহাম্মদ মাহফুজুর ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের নিয়েই এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। এ ছাড়া তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।