গড়াই নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ২ গ্রাম

গত তিন সপ্তাহে অন্তত সাত বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকটি পরিবার বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে।

গড়াই নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। সম্প্রতি শৈলকুপা উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নে আবারও গড়াই নদের দক্ষিণ পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর, গোসাইডাঙ্গা, কাতলাগাড়ি, সারুটিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম।

গত তিন সপ্তাহে বড়ুরিয়া ও কৃষ্ণপুর গ্রামের অন্তত সাত বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের আশঙ্কায় কয়েকটি পরিবার বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে।

উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর, কাতলাগাড়ি, গোসাইডাঙ্গা ও সারুটিয়া গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই নদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ বছর ধরে নদের ভাঙনের শিকার বড়ুরিয়া। একসময় এখানে অন্তত ১ হাজার ৪০০ বিঘা ফসলি জমি ছিল।

এখন টিকে আছে ২৫০ বিঘা। আগে গ্রামে দুই শ পরিবার ছিল। ভাঙনের কারণে বিভিন্ন সময় ৩০টি পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এখনো যারা গ্রামে টিকে আছে, তারা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কয়েক দফা ঘর সরিয়েছে। একই অবস্থা কৃষ্ণনগর গ্রামের। এই গ্রামে ৪০টি পরিবারের বসতভিটা ও চাষের জমি বিলীন হয়েছে গড়াই নদে। প্রতিবছরই ওই দুটি গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ছে। পাশের গোসাইডাঙ্গা, কাতলাগাড়ি ও সারুটিয়া গ্রামও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বড়ুরিয়া গ্রামে নদের পাড়ে চারটি পরিবার এবং কৃষ্ণনগর গ্রামের উত্তারপাড়া এলাকায় নদের পাড়ে রাস্তার পাশে নতুন ঘর তুলেছে পাঁচটি পরিবার। তারা নদের ভাঙনের শিকার। টিন দিয়ে সাময়িক বসবাসের ঘর তৈরি করে আছেন। মাটির রাস্তার উত্তর পাশে পুরোনো ভিটা। সেখানকার বেশির ভাগ জায়গা নদে বিলীন হয়েছে।

বড়ুরিয়া গ্রামের গৃহবধূ সাথী খাতুন বলেন, তাঁরা রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারেন না। পাঁচবার বাড়ি ভেঙেছে। নতুন স্থানে বাড়ি সরিয়ে নেন। কিছুদিন পরে সেই জায়গাও পানিতে বিলীন হয়। একসময় গ্রামে তাঁদের ২৫ বিঘা জমি ছিল। এখন বাড়ি সরানোর মতো আর কোনো জায়গাও নেই।

সাথী খাতুন আরও বলেন, নদের পাড়ে এই ঘর বানিয়েছেন দুই মাস হয়েছে, তাঁর তিন বছরের ছেলে ফরহাদ পানিতে পড়ে গিয়েছিল। অল্পের জন্য তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

কৃষ্ণনগর গ্রামের আবদুর রহিম মণ্ডল বলেন, ভাঙনের কারণে বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছেন ছয়বার। তাঁর আটবিঘা জমি ছিল। পাকা ভিতের ওপর টিনের ঘর ছিল। গরু-ছাগল পালতেন। এখন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। সবকিছু চলে গেছে এই গড়াই নদে।

কৃষ্ণনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, গড়াই নদ আগে অনেকটা উত্তরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে দক্ষিণে কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঝে চলে এসেছে। আগে তাঁদের ঘর-বাড়ি নদের যে স্থানে ছিল, সেখানে এখন চর। সেখানে কুষ্টিয়া থেকে কিছু পরিবার এসে বসবাস করছে। তাঁরা দক্ষিণে সরে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন।

বড়ুরিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, গত দুই দশকে তাঁদের গ্রামের আনসার আলী, আজাদ হোসেন, তারেক আলী, আবদুল মান্নান, রবিউল ইসলাম, সামছুল আলমসহ অন্তত ৩০ জন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। একই ভাবে কৃষ্ণনগর গ্রামের ৪০টি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। কেউ অন্যত্র জমি কিনে ঘর করেছেন। আবার কেউ সব হারিয়ে যাযাবরের মতো বসবাস করছেন।

এ ব্যাপারে সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক বলেন, নদের পাড়ের মানুষগুলোকে বাঁচাতে হলে এখনই স্থায়ী বাঁধ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শৈলকুপা কার্যালয়ের কর্মকর্তা বিকর্ণ দাস বলেন, ঝিনাইদহ অংশে গড়াই নদের ২০ কিলোমিটার রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে বড়ুরিয়া এলাকায় কিছু কাজ হয়েছে। বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর ও লাঙ্গলবাঁধ এলাকার ২৩৫ কোটি টাকায় ৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণকাজের একটি প্রাক্কলন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটা অনুমোদন পেলে তাঁরা দ্রুত কাজ শুরু করবেন। আপাতত বালুর বস্তা ফেলে ঘরবাড়ি রক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন।