সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও ঘরবাড়ি ছাড়ছেন না লোকজন

লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। আজ রোববার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নীল ডুমুর এলাকায়ছবি: সাদ্দাম হোসেন

বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এতে আতঙ্ক থাকলেও ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূল এলাকার লোকজন। এরই মধ্যে আজ রোববার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইছে।

আজ সকালে শ্যামনগর এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের ঘোষণা শোনার পর থেকেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় নদ-নদীর পানি জোয়ারে কী পরিমাণ বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখছেন এলাকাবাসী। তাঁরা মনে করছেন, জোয়ারে যদি পানি দুই থেকে তিন ফুটের বেশি বৃদ্ধি না পায়, তাহলে তাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন না।

সুন্দরবনসংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, রমজানগর কৈখালী, আটুলিয়া ও কাশিমাড়ি ইউনিয়ন খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের পাশে অবস্থিত। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এসব নদ-নদীর পানি বেড়িবাঁধ উপচে বাড়িঘর ও গ্রাম প্লাবিত হয়।

গাবুরা গ্রামের ৭০ বছর বয়সী বাবুর আলী গাজী বলেন, আজ বেলা ১১টার পরে নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টায় নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট জোয়ারের পানি বেড়েছে। যদি বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে না ঢোকে, তাহলে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন না।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি গ্রামের কল্পনা মণ্ডল বলেন, তাঁদের গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে খোলপেটুয়া নদী। প্রতিবছর নদীভাঙনে তাঁদের ফসলের মাঠ ডুবে যায়। বাড়িঘর তলিয়ে তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাঁদের গ্রামের পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ততটা মজবুত নয়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইছে। কখন যে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়, এই শঙ্কার মধ্যে আছেন। এরপরও বাড়িঘর ছেড়ে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন কি না, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
এরই মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। তাঁদের একজন হলেন গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনিমোখা গ্রামের রাফিরা খাতুন। তিনি বলেন, ছেলেমেয়ে নিয়ে খুবই আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। মাইকিং করায় ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের অনুরোধে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বিলু মণ্ডল বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস বইছে। যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় তিনি বাজার থেকে শুকনা খাবার কিনে বাড়ি ফিরছেন। বাড়ি গিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন কি না?

আজ দুপুরে স্বেচ্ছাসেবকদের গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনিমোখা মান্নান মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকজনকে পৌঁছে দিতে দেখা যায়। সেখানে আশ্রয় নেওয়া আবুল কালাম ও শেফালী বেগম জানান, তাঁরা ঝুঁকি এড়াতে আগেভাগেই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছেন।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে নারী ও শিশু মিলিয়ে ১৪০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করার পাশাপাশি তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। উপজেলায় ১৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ভবন ও মজবুত বাড়ি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।