ইউএনওর মধ্যস্থতায় বাবা–মায়ের ঠাঁই হলো ছোট ছেলের বাড়িতে

বাবা বারিক গাজী (৮৪) এবং মা শহর বানুকে (৭৮) ছোট ছেলের বাড়িতে ফিরিয়ে দিচ্ছেন যশোরের কেশবপুরের ইউএনও এম এম আরাফাত হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের কেশবপুর উপজেলার জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাঁদের ছোট ছেলেকে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন নিজ কার্যালয়ে পরপর দুদিন সালিস করে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের ছোট ছেলের জিম্মায় তুলে দেন।

ছেলে যদি বাবা-মায়ের ঠিকমতো ভরণপোষণ না দেন, তাহলে বাবার কাছ থেকে লিখে নেওয়া জমি ফেরতসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এক অঙ্গীকারনামাও করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৮৫ বছরের বৃদ্ধ বাবা আবদুল বারিক গাজীর সব সম্পত্তি লিখে নেন দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়েরা। বারিক গাজী ও তাঁর স্ত্রী শহর বানু (৭৮) বড় ছেলে সাজ্জাত গাজীর বাড়ির বারান্দায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি জমির পরিমাণ কমবেশি হওয়া নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন সাজ্জাত ও তাঁর বউ। এ সময় তাঁদের থাকার বারান্দার ছোট ঘরটিও ভেঙে দেওয়া হয়।

নিরুপায় হয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনওর কাছে ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আবদুল বারিক গাজী। ইউএনও অভিযোগ পেয়ে আবদুল বারিক গাজীর ছেলে ও মেয়েদের গত সোমবার উপজেলা কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেন।

ইউএনও তাঁর দপ্তরে দুই দফা সালিস করে তাঁদের মধ্যকার এ সমস্যা নিরসন করেন ও ছোট ছেলে সাঈদ গাজীর জিম্মায় বাবা-মাকে দিয়ে দেন। এ সময় একটি অঙ্গীকারনামা করা হয়। তাতে বলা হয় সাঈদ যদি বাবা-মায়ের ভরণপোষণ না দেন, তাহলে বাবার কাছ থেকে যে জমি লিখে নিয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ইউএনও আরাফাত হোসেন বলেন, আবদুল বারিক গাজী ও তাঁর স্ত্রী এখন থেকে ছোট ছেলে সাঈদ গাজীর বাড়িতে থাকবেন। মঙ্গলবার তাঁদের ছোট ছেলের বাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, আবদুল বারিক গাজীর ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে। সম্প্রতি আবদুল বারিক গাজীর ছোট ছেলে আবু সাঈদ ২৪ শতক, ৫ মেয়েরা ১৬ শতক এবং বড় ছেলে সাজ্জাত গাজী ২ শতক জমি তাঁকে ভুল বুঝিয়ে কেশবপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল করে লিখিয়ে নেন। জমি লিখিয়ে নেওয়ার পর থেকে বড় ছেলে সাজ্জাত গাজী ও ছোট ছেলে আবু সাইদ গাজী বৃদ্ধ বাবা ও মাকে ঠিকমতো খেতে দিতেন না। একপর্যায়ে তাঁদের মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। বারান্দায় থাকার ছোট ঘরটির টিনের চাল ও বেড়া ভেঙে দেন সাজ্জাত ও তাঁর স্ত্রী। এ ছাড়া বারিক গাজীর চলাচলের হুইলচেয়ারটিও ভেঙে ফেলা হয়।

আবদুল বারিক বলেন, দুই বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি পা ভেঙে যায়। তখন তাঁর ছেলেরা কোনো চিকিৎসা করাননি তাঁর। তিনি বর্তমানে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়া স্ত্রী শহর বানু বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না।